দুই শিক্ষক দিয়ে ৩৯৫ শিক্ষার্থীর পাঠদান

খোলা মাঠে পাঠদান (ছবি- প্রতিনিধি)

শিক্ষক সংকটে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের পূর্ব গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এখানে ৩৯৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন মাত্র দুই জন। দুই জনকের একজনকে দাফতরিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। আর অন্যজন জোড়াতালি দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালান।


এ বিদ্যালয়ের মূল ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় ২০১৫ সালে একে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে উপজেলা প্রকৌশল কমিটি। নতুন করে আর ভবন নির্মাণ না হওয়ায় এ বিদ্যালয়ে খোলা মাঠে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। গত দুই বছর ধরেই এ অবস্থা বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, আশেপাশের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ১৯৬৯ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন পূর্ব গাজীপুর গ্রামের কিছু মানুষ। ১৯৯৪ সালে সরকারিভাবে এ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয় এবং ২০১৩ সালে এ বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বিদ্যালয়ে পাঁচ জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু এখন আছেন দুই জন। এর মধ্যে একজনকে আবার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, কিছুদিন আগেও এ বিদ্যালয়ে চার জন শিক্ষক ছিলেন। গত মাসে সোহেল রানা নামে একজন সহকারী শিক্ষক এক বছরের প্রশিক্ষণে যান। এর আগে নাসরিন আক্তার নামে আরও একজন শিক্ষক ডেপুটেশনে উপজেলার জয়নাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে যান।
তাহমিনা আক্তার নামের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, শিক্ষক সংকট থাকায় প্রতিদিন সব ক্লাস হয় না। বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীরা খেলা করে বেশিরভাগ সময় পার করে।
অভিভাবক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আশপাশের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও বিদ্যালয় না থাকায় বাধ্য হয়ে সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছি। কিন্তু এ বিদ্যালয় থেকে ছেলেমেয়েরা কিছু শিখতে পারছে বলে মনে হয় না। পর্যাপ্ত শিক্ষকই নেই, শিখবে কিভাবে।’

বিদ্যালয়ের মূল ভবন (ছবি- প্রতিনিধি)
বিদ্যালয়ের সহাকারী শিক্ষক তাসলিমা নাসরিন বলেন, ‘প্রায়ই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের কাজে উপজেলা সদরে চলে যান। তখন একা আমাকেই বিদ্যালয় চালাতে হয়। এছাড়া, দুই জনে ছয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো অনেকটা অসম্ভব। একই সময়ে একাধিক শ্রেণিতে পাঠদানের শিডিউল থাকে। কিন্তু পাঠদান আর করানো হয় না।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান জানান, ভবন নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষক স্বল্পতার ব্যাপারটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আবুল হাসেম প্রধান জানান, গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হয় শিক্ষকদের।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, বিদ্যালয়টির বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেছি। পাঠদানের পরিবেশ নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ইউসুফ খান জানান, তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন। শিক্ষক সংকটসহ বাকি সমস্যা দূর করবেন।