চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা জোরদার

চট্টগ্রাম বন্দর (ছবি- সংগৃহীত)বহির্নোঙরে পাঠানো একটি শিপিং এজেন্টের নৌকায় বিদেশি মদ পাওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বন্দর সচিব ওমর ফারুক নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের ওয়াচম্যান  পাঁচ বোতল মদ উদ্ধারের ঘটনায়  বন্দর পরিচালকের (নিরাপত্তা) পক্ষ থেকে সব শিপিং এজেন্ট, কোস্টগার্ড, ডিজি শিপিংসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্তকর্তা অবলম্বনের জন্য ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ এ ধরনের ঘটনা যেন আগামীতে না ঘটে, সেজন্য বন্দরের পক্ষ থেকে বাড়তি সর্তক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ওমর ফারুক বলেন, ‘শিপিং এজেন্টদের সর্তক করার জন্য আমাদের মেরিন ডিপার্টমেন্ট এবং আইএসপিএস-এর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হবে। আর যে শিপিং এজেন্টের পাঠানো নৌকা থেকে মদগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি (আইএসপিএস) কোড অনুযায়ী সোলাস (সেইফটি অব লাইফ অ্যান্ড সী)মূল শিপের কাছে অন্য কোনও শিপ বা বোটকে যেতে হয়, তবে ওই শিপ অথবা বোটকে রেজিস্ট্রিভুক্ত হতে হবে। ওই শিপকে সিকিউরিটি কমপ্লায়েন্স মেনে চলতে হবে।’ সোলাস শিপ বলতে বিদেশি জাহাজকে বুঝানো হয় বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘ওই দিন যে বোট থেকে বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে শিপিং এজেন্টের মনোনীত কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। ওই নৌকার মাঝির কাছ থেকে মদের বোতলগুলো উদ্ধার করা হয়।’

এই বন্দর কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা গ্রিন পোর্টের স্বীকৃতি লাভ করেছি কয়েক বছর আগে। তার আগে চট্টগ্রাম বন্দর দীর্ঘদিন আইএমও  লিস্টে রেড পোর্টের তালিকায় ছিল। তাই নিরাপদ পোর্ট হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর যে স্বীকৃতি পেয়েছে, সেটি অক্ষুণ্ন রাখতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তা না-হলে বহির্নোঙরে থাকা জাহাজে যেকোনও নৌকা, জাহাজ চলে যেতে পারে। ওই সব জাহাজের নিরাপত্তা বিঘ্নি হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘জাহাজগুলোতে ওয়ারলেস থাকে, সেখানে কোনও ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কোন পোর্টে কতগুলো চুরি হয়েছে, দুর্ঘটনা ঘটেছে আইএমও ওয়েবসাইটে সব তথ্য থাকে। এসব তথ্যের আলোকে তারা বন্দরগুলোকে র‌্যাংকিং করে। এসব ছোটখাটো বিষয়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম নষ্ট হোক, আমরা তা চাই না। সেজন্যই বাড়তি সর্তকর্তা নেওয়া হয়েছে।’ 

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানরত এমভি ওয়েল লঙ্কা জাহাজে পাঠানো শিপিং এজেন্ট জিবিএক্স লজিস্টিক্স লিমিটেডের নৌযান তল্লাশি করে পাঁচ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা) স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বরাবরে পাঠানো হয়।

চিঠিতে শিপিং এজেন্ট মনোনীত ছাড়া কাউকে বিদেশি জাহাজে না পাঠানো, ছোট নৌযান পাঠানোর সময় বন্দরের রেডিও কন্ট্রোলকে অবহিত করা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনুমোদনহীন বা বিপজ্জনক পণ্য বিদেশি জাহাজ থেকে স্থলে আনা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। পাশাপাশি দাফতরিক কাজে বিদেশি জাহাজে শিপিং এজেন্টের পাঠানো নৌযানগুলোকে রেজিস্ট্রিভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চত করে শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্দরের নিরাপত্তা শাখা থেকে আমাদের একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে সোলাসের যে নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চলার কথা বলা হয়েছে— সেগুলো সব সদস্যকে জানিয়ে দেবো।’

বন্দর সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে আমাদের লেভেল ওয়ান নিরাপত্তা আছে। তারপরও শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি প্রদানের পাশাপাশি সর্তকতা বাড়ানো হয়েছে, যেন সামনে এ ধরনের কোন ঘটনা আর না ঘটে।’ তিনি বলেন, ঘটনা ছোট হলেও এসবের কারণে বন্দরের ভাবমূর্তি  ক্ষুণ্ন হতে পারে।’