সম্প্রতি এসব স্থানে সরেজমিনে দেখা যায়, জঙ্গি উপস্থিতি এবং এর জেরে অভিযানের আতঙ্ক জনমনে আর নেই। স্বাভাব্কি ছন্দে ফিরেছে এলাকাবাসীর জীবন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, জেলার কোথাও কোনও জঙ্গির খবর নেই। তাদের মধ্যে জঙ্গিভীতিও নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে জঙ্গিরা সব পালিয়ে গেছে। অনেকে মারা গেছেও বলে জানান তারা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনে পাড়ার যে বাড়িটিতে অভিযান চালায়, সেখানে মাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। অভিযানের পর বাড়িটির টিন, ইটসহ আসবাবপত্রের অবশেষ যা ছিল রাতের অন্ধকারে কে বা কারা সেসব নিয়ে গেছে। এখন সেখানে আছে শুধু জমিটুকু।
জঙ্গি আব্দুল্লাহর বাড়ির পাশের বাসিন্দা কৃষক আবু তাহের, সোনা ভানসহ এলাকার অনেকেই জানান, অভিযানের পর মাঝে-মধ্যে সেখানে পুলিশ আসতো। অনেক মানুষ বাড়িটি দেখতো আসতো। কিন্তু এখন আর কেউ আসে না। এমনকি জায়গা-জমির দাবি নিয়ে কোনও আত্মীয়-স্বজনও কখনও আসেনি।
বাড়ির ইটের দেওয়াল, ঘরের টিনসহ ভেতরের মালামাল কোথায় গেল, জানতে চাইলে তারা জানান, অভিযানের সময় বোমা বিস্ফোরণের ফলে বাড়ির মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। আর ইট ও টিন কে বা কারা রাতে অন্ধকারে নিয়ে গেছে তা তাদের জানা নেই।
অন্যদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে,সদর উপজেলা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কংশী গ্রামে জঙ্গি আব্দুল্লাহ আরেকটি বাড়ি বানাচ্ছিল, সেটিও সেই অবস্থায়ই পড়ে আছে।
কংশী পূর্ব পাড়ার কৃষক আবুল কাশেম ও আব্দুর রশীদ জানান, একই গ্রামের ফারুক হোসেনের কাছ থেকে ১০ শতক জমি কিনে আব্দুল্লাহ যে বাড়িটি নির্মাণ করছিল, অভিযানের পর বাড়িটি সেভাবেই পড়ে আছে। কখনও জায়গা বা বাড়ির দাবি নিয়ে সেখানে কেউ আর আসেনি।
গত বছরের ১৬ ও ১৭ মে চুয়াডাঙ্গা গ্রামের নব্য জেএমবির সদস্য সেলিম ও প্রাপ্তদের বাড়িতে র্যা ব অভিযান চালায়। বাড়িটিতে সেলিমের পরিবারের সদস্যরা আছে। অভিযানের সময় সেলিম ও প্রাপ্তকে গ্রেফতার করা হয়।
সেলিমের ভাই ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের ছাত্র রিজভী আহম্মেদ সেতু জানান, অভিযানের পর তারা বাড়িতেই বসবাস করছেন। বাড়িটি কখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেয়নি। সম্প্রতি সেলিম ও প্রাপ্ত আদালত থেকে জামিনে পেয়েছে। তারা এখন মাঠে কাজ করছে বলেও তিনি জানান।
গত বছরের ৭ মে সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের মৃত শরাফত মণ্ডলের দুই ছেলে শামীম ও হাসানের বাড়িতে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সেখান থেকে শামীম, হাসান ও তার মা সুফিয়া খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়।
শামীম ও হাসানের প্রতিবেশী বুলবুলি খাতুন জানান, জঙ্গি অভিযানের পর মাঝে-মধ্যে পুলিশ আসতো। তাদের খবরাখবর নিতো। তারা কখন কী করছে তা জানতে চাইতো। এখনও মাঝে-মধ্যে পুলিশ আসে। তিনি জানান, বর্তমানে হাসান ও তার মা সুফিয়া খাতুন জামিনে আছে।
জহুরুলের মা রোকেয়া বেগম জানান, তারা ঝিনাইদহের আলম নামের এক ব্যক্তির কাছে তাদের বসতবাড়ির পেছনের একটি বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন। সেখানে নাকি জঙ্গি ছিল। অভিযানের পর একমাস বাড়িটি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরে এলাকার চেয়ারম্যান ও পুলিশ এসে বাড়িটি আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ বলেন, ‘নিহত জঙ্গি আব্দুল্লাহ’র বাড়ি ও বসতভিটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সেটি স্থানীয় সরকারের (ইউপি) প্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয়েছে। একজন ইউপি মেম্বার সেটা দেখভাল করছেন।’ এছাড়া তার স্ত্রী রুবিনা এখন জেলে রয়েছে বলে তিনি জানান।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লস্কার জায়াদুল হক বলেন, তিনি থানায় নতুন যোগদান করেছেন। তবে এলাকারবাসীর মধ্যে কোনও জঙ্গি-ভীতি নেই। এ ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
২০১৭ সালের ২১ ও ২২ এপ্রিল সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনে পাড়ায়, একই বছরের ৭ মে মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর ও সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামে এবং ১৬ ও ১৭ মে চুয়াডাঙ্গা গ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ‘অপারেশন ‘সাউথ প’ ও ‘অপারেশন সাটল স্প্লিট’ চালায়। অভিযানের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নব্য জেএমবির সদস্য আব্দুল্লাহ ও পুলিশের গুলিতে তুহিন নিহত হয়।