তারা কেন আমাদের মুক্তি দিলো, জানি না: দয়াসোনা চাকমা

ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে দয়াসোনা চাকমাকে

অপহরণের একমাস একদিন পর ছাড়া পেয়ে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী দয়াসোনা চাকমা বলেছেন, ‘তারা কেন আমাদের মুক্তি দিলো, সেটা আমরা জানি না।’

অপহরণ ও ছাড়া পাওয়ার ব্যাপারে শুক্রবার (২০ এপ্রিল) বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমরা যদিও ওদের কাছে আসামি হই, তারপরও তারা সেই ধরনের আচার-আচরণ করেনি। আমাদের সহযোদ্ধার মতোই দেখেছে। অপহরণের পর তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আমাদের হেঁটে নিয়ে যায়, কোথায় নিয়ে যায় সে গ্রামটির নাম আমরা জানি না, তবে শেষ পর্যন্ত তারা কেন আমাদের মুক্তি দিলো সেটাও আমরা জানি না।’

শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটির জেলার কাউখালীর উপজেলার দুর্গম হাজাছড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে বসে এসব কথা বলেছেন দয়াসোনা চাকমা।

এসময় দয়াসোনা চাকমা আরও বলেন, ‘গত ১৮ মার্চ সকালে নতুন সংগঠন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) আমাদের তুলে নিয়ে নানিয়ারচরে যায়। সেখান থেকে ২০ তারিখ একটি বোটে করে খাগড়াছড়ির মহলছড়ির দিকে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই তাদের লোকজন আমাদের জন্য অপেক্ষায় ছিল। পরে একটি সিএনজি দিয়ে ৩০ মিনিট নিয়ে যাওয়ার পর আমাদের আরও ২ ঘণ্টা হেঁটে নেওয়ার পর একটি বাড়িতে রাখা হয়। পরের দিন আবার হাঁটা শুরু। পরে আমাদের মেরুং এর একটা গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছাতে আমাদের দুই দিন দুই রাত লাগে। ওই গ্রামে আমাদের ২-৩ দিন রাখা হয়েছে। পরে আমাদের পাশের একটি গ্রাম বাজেছড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান তারা আমাদের কাছ থেকে জোর করে লিখিত নেয়। আমাদের লিখতে হয়েছে- আমরা ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দ্বারা অপহৃত হইনি।’

মায়ের সঙ্গে দয়াসোনা চাকমা

দয়াসোনা চাকমা আরও বলেন, ‘ওরা আমাদের বলেছে- আমার বাবা মামলা করেছে জন্য আমাদের মুক্তি দেয়নি ওরা।’

মামলার ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘ওরা অপহরণ করেছে, আমার বাবা তো মামলা করবেই।’

তবে ছাড়া পাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘শেষমেশ কি করে মুক্তি দিলো, আমি এটা জানি না।’

এদিকে দয়াসোনা চাকমা বৃহস্পতিবার ছাড়া পাওয়ার পর শুক্রবার দুপুরে গ্রামে পৌঁছালে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় তাকে। 

দয়াসোনার মা কালিন্দী রানী চাকমা বলেন, ‘অনেক দিন পর আমার মেয়েকে দেখতে পেয়ে, কাছে পেয়ে, খুবই ভালো লাগছে। কত খুশি হয়েছি তা বলে বোঝাতে পারবো না।’

কাউখালীর উপজেলার দুর্গম হাজাছড়া গ্রামে যাওয়ার পথ

এ ব্যাপারে কাউখালি উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জগদীশ চাকমা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার তাদের ছেড়ে দিয়েছে, আমিও শুনেছি। এখন তার বাবা-মার কাছে সেটিও শুনলাম। আমি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাদের মাধ্যমে খোঁজ খবর রাখছি।’ অপহরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অপহরণ কারা করে, কীভাবে করে, কীভাবে করতেছে, এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’

এদিকে দয়াসোনা চাকমার সঙ্গে একই সময়ে অপহরণ হয়েছিলেন ও ছাড়া পেয়েছেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা। এ ব্যাপারে মন্টি চাকমার ভাই সুভাষ চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মন্টি চাকমা বর্তমানে নানিয়ারচর উপজেলা বেতছড়ি গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন। তবে তিনি মিডিয়াতে কথা বলতে রাজি নন।’

উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ রাঙামাটির কুতুকছড়ি থেকে সকাল সোয়া ৯টায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও একই সংগঠনের রাঙামাটির জেলার সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার দয়াসোনা চাকমার বাবা বৃষধন চাকমা বাদী হয়ে গত ২১ মার্চ রাঙামাটির কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। অপহরণের একমাস একদিন পর বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের মধুপুরের এপিবিএন গেট এলাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’