কিশোরীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগে তিন এনজিওকর্মী আটক

কিশোরীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগে তিন এনজিওকর্মী আটকবিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে যৌনকর্মীদের সন্তানদের সুরক্ষা এবং লেখাপড়ার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় এনজিও শাপলা মহিলা সংস্থার বিরুদ্ধে এক  কিশোরীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে শাপলা মহিলা সংস্থার তিন কর্মীকে আটক  করে মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

আটক এনজিওকর্মীরা হলেন- শাপলা মহিলা সংস্থার অফিস সহকারী রিনা সাহা (৩৮), অফিসের সিকিউরিটি গার্ড ইউনুস শেখ (৪০), আয়া রুবি আক্তার (৫০)। এছাড়াও আটক  করা হয় পতিতা পল্লির নারী সর্দার হিসেবে চিহ্নিত তানিয়া বেগমকে। এসময় পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হওয়া কিশোরীটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতদের কোতোয়ালি থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানার রুদ্রপুর গ্রামের ওই কিশোরী (১৬) তার বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টস কারখানায় কাজ নেয়। গত রবিবার (২২ এপ্রিল) অন্যদিনের মতো সকালের শিফটে কাজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলে এক  ব্যক্তি বেশি বেতনে অন্য গার্মেন্টেসে কাজ দেওয়ার কথা বলে তাকে। কথা বলার এক পর্যায়ে ওই কিশোরীকে আপ্যায়নের প্রস্তাব দেয় ওই ব্যক্তি এবং কোমল পানীয়ের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে। পরে তাকে ফরিদপুরে নিয়ে এসে দালালচক্রের মাধ্যমে শহরের রথখোলা পতিতা পল্লিতে নিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী কিশোরী জানান, সোমবার পতিতা পল্লিতে থাকা দুই নারী তাকে সহযোগিতা করবে বলে জানিয়ে অটোরিকশায় করে তাকে আদালত পাড়ায় নিয়ে যায়। আদালত পাড়ায় নেওয়ার পর ওই দুই নারীর কথাবার্তায় তার সন্দেহ হয়। এই কিশোরী বলে, ‘আমি বুঝতে পারি ওরা আমাকে নিয়ে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করছে। আমি খাবারের কথা বলে আদালত এলাকা থেকে বের হয়ে আসি। পরে হোটেলে গিয়ে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয়রা ওই দুই নারীকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, শাপলা মহিলা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে এনজিও’র ছদ্মবেশে অল্প বয়সী মেয়েদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করছে। পতিতাদের নিয়ে কাজ করার আড়ালে তাদের কর্মীরা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। বিষয়টি একাধিকবার পরিচালককে জানালেও তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি।

শাপলা মহিলা সংস্থার পরিচালক চঞ্চলা মণ্ডল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যৌনকর্মীদের নানা বিষয় নিয়ে কাজ করছি। কীভাবে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। বর্তমানে আমি ফরিদপুরের বাইরে আছি। এ বিষয়ে ফরিদপুরে এসে কথা বলবো।’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম নাসিম জানান, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পতিতাবৃত্তির কাজের এফিডেভিট করতে তারা মেয়েটিকে আদালত পাড়ায় নিয়ে গিয়েছিল। মেয়েটির চিৎকারে স্থানীয় জনতা তাদের ধরে ফেলে। খবর পেয়ে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং এনজিও’র তিন কর্মী এবং পতিতাপল্লি থেকে আরও একজনকে আটক  করা হয়। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।’