'ইউপিডিএফ নেতাদের নির্দেশে লক্কোচ চাকমা হত্যা করে শক্তিমানকে'

শক্তিমান চাকমানানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে হত্যার জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর শীর্ষ নেতাদের দায়ী করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)। বৃহস্পতিবার (৩ মে) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা, সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা, আনন্দ প্রকাশ চাকমা ও রঞ্জন মনি (আদি)  কে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেছে দলটি। ইউপিডিএফ সদস্য লক্কোচ চাকমা এক সহকারী নিয়ে গুলি চালায় বলেও অভিযোগ করেছে তারা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফ। 

জেএসএস এর তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা সাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়,  ‘ইউপিডিএফএর সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা, সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা, আনন্দ প্রকাশ চাকমা ও রঞ্জন মনি (আদি) চাকমার সিদ্ধান্তে জনসংহতি সমিতির নেতাদের খুন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। রঞ্জন মনি (আদি) চাকমা বর্তমানে ইউপিডিএফ এর কোম্পানি কমান্ডার। তিনি মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ইউনিটে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দেন। নির্দেশ পাওয়ার পর সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের মাচালং দীপুপাড়া এলাকার লক্কোচ চাকমা, ডাক নাম বাবু চাকমা, দলীয় নাম অর্পন চাকমা (কালেক্টর) একজন সহকারী নিয়ে মোটরসাইকেলে করে দুই ঝোলা কাঁধে রেখে অ্যাড. শক্তিমান চাকমাকে খুব কাছে ও সামনে থেকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই বর্বরোচিত ও ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের জন্য সন্ত্রাসী ও হত্যাকারী সংগঠন ইউপিডিএফ সরাসরি দায়ী। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাই।’ ভবিষ্যতে যাতে এরকম নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক প্রশান্ত চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সব সময় শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে ছিলাম। আর ইউপিডিএফ বরাবরই এর বিরোধিতা করে আসছিল। চুক্তি বাস্তবায়ন হলে তাদের অবস্থান থাকবে না পাহাড়ে। তাই তারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের নেতাকর্মীতের হত্যা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকালে আমাদের নেতাকে হত্যা করলো। তারা কখনও পাহাড়ে শান্তি চায় না বলেই এমন হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার হত্যাকাণ্ডের পরপরই এতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন ইউপিডিএফের মুখপাত্র নিরন চাকমা। তিনি বলেন, ‘এটা মিথ্যা ও বানোয়াট। এ ঘটনার সঙ্গে ইউপিডিএফের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।’ শুক্রবার সকালে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনোভাবেই ইউপিডিএফ জড়িত না। জেএসএস এর এমন অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। এটা তাদের মনগড়া অভিযোগ। শক্তিমান যেখানে থাকতেন সেখান থেকে বাইরের কেউ গিয়ে তাকে হত্যা করে ফিরে আসা কঠিন। তাই আমার মনে হয় এটি তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে হতে পারে। অথবা তৃতীয় কোনও পক্ষ ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে।'

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে বৃস্পতিবার প্রকাশ্যে দিনের আলোতে  গুলি করে হত্যা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শক্তিমান চাকমা তার সরকারি বাসভবন থেকে স্থানীয় বাজারে যান। বাজার থেকে মোটরসাইকেলে করে উপজেলা পরিষদের সামনে আসেন। মোটরসাইকেল থেকে নামতেই গুলি করা হয় তাকে।  ঘটনাস্থলেই মারা যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শক্তিমান চাকমার লাশ উদ্ধার করে।  এ ঘটনায় তার সহকারী রুপম চাকমা (৩৫) আহত হয়েছেন। শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যার ঘটনা গুরুত্ব সহকারে দেখতে রাঙামাটির পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আরও পড়ুন- নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা