এবার খাগড়াছড়িতে আমের ফলন হয়েছে প্রচুর। কয়েক দশক ধরে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ পাহাড়ের সুমিষ্ট আম্রপালির কথাই জেনে এসেছেন। এর সঙ্গে রয়েছে রঙ-বেরঙের নানা ঘ্রাণের সুস্বাদু সব বাহারি নামের পাহাড়ি আম। কোনটার রঙ সবুজাভ, কোনটা লালচে, কোনটা মরিচ রঙা আবার কোনটা ধূসর! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ‘ব্রুনাই কিং’ জাতের একেকটি আমের ওজন গড়ে দুই কেজির বেশি। ‘কুমিল্লা’ জাতের আমও একেকটি গড়ে আধা কেজির ওপরে। সারাদেশের মতো হিমসাগর, মাহালিশা, কাঁচামিঠা ও মল্লিকার কথা না হয়বাদই দিলাম। স্থানীয় জাতের বিপুল সংখ্যক আমও এবার বাজারজাত করছেন বাগানিরা।
ও হ্যাঁ, বেড়াতে এলে তো থাকার একটা ব্যবস্থা হবেই। বেড়ানোও যাবে। কিন্তু ‘ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি আম কুড়োতে সুখ’ পাবেন কোথায়?
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী আম মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। তিনি খাগড়াছড়িতে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের মানসম্পন্ন আমের ব্র্যান্ডিংয়ের রুপরেখা প্রনয়ণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
খাগড়াছড়ি চেম্বারের সভাপতি সৌখিন আম মেলার উদ্যোক্তাদের হাতে নগদ এক লাখ টাকা তুলে দেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাহাড়ের বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করে দিয়েছেন। পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশনা আছে। আগামী অর্থবছরেই খাগড়াছড়িতে একটি হিমাগার স্থাপিত হবে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আলী আহম্মদ খান, জেলা পরিষদ সদস্য মংক্যচিং চৌধুরী, জেলা উদ্যান কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনসহ বিভিন্ন বাগান মালিকরা মেলার আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন।
বেসরকারি পর্যায়ে খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় বিলাসবহুল আবাসিক ‘হোটেল গাইরিং’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস. অনন্ত ত্রিপুরা বলেন, ‘পবিত্র ঈদ উৎসবের সঙ্গে এবারের আম মেলা এবং আগাম বর্ষা খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অন্য রকমভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। পথে-ঘাটে পাহাড় ধ্বসের শংকা থাকলেও এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর তৎপর রয়েছে। বর্ষায় পাহাড়ের প্রকৃতি উপভোগে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আমাদের সর্বোচ্চ ছাড় থাকবে।’
জেলা শহরের মহাজন পাড়ায় অবস্থিত ভিন্নধর্মী খাবারের দোকান ‘রাইন্যা টুগুন’-এর পরিচালক লোকজ্যোতি চাকমা বলেন, স্থানীয় বাজারে এখন প্রচুর পরিমাণে ছোট-বড় মাছ সহজলভ্য। শাক-সবজি’র সঙ্গে গ্রামে পালন করা হাঁস-মুরগি-কবুতরের দামও সহনীয়। তাই যারাই বেড়াতে আসবেন, স্বস্তি পাবেন সীমিত বাজেটের মধ্যেই।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম নিজেও একজন প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। তিনি খাগড়াছড়িতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই মনোযোগ দেন পাহাড়চূড়া আলুটিলা’র দিকে। তার উদ্যোগে আমূল বদলে গেছে আলুটিলা পর্যটন স্পট। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা আর সান্ধ্যকালীন সোলারের আলোয় উদ্ভাসিত আলুটিলায় আপনি সময় কাটাতে পারবেন সন্ধ্যা অবধি।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পরিবহন খাতে ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু অসঙ্গতি এখনও কাটিয়ে উঠা যায়নি। তবু বলবো, যারা খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসবেন, তারা ঠকবেন না। অন্তত কম খরচে যাতে পর্যটকরা বিনোদন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন সব সময় তৎপর।’