দৌলতদিয়া ঘাটে অচল সিসি ক্যামেরা, তৎপর অপরাধীরা

দৌলতদিয়া ঘাট (ছবি: রাজবাড়ী প্রতিনিধি)রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার বলা হয় রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ঘাটকে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন ও লক্ষাধিক যাত্রী পদ্মা পাড়ি দেন। লঞ্চ ও ফেরিতে পদ্মা পারাপার হওয়া যাত্রীদের বিড়ম্বনা কমাতে এবং তাদের ওপর পকেটমার, ছিনতাইকারী, মলমপার্টি, দালালসহ বিভিন্ন অপরাধীদের তৎপরতা কমাতে স্থাপন করা হয় সিসিটিভি ক্যামেরা। তবে স্থাপনের মাসখানেক পর থেকেই এগুলো  অচল হতে শুরু করে। অপরাধী চক্রের সদস্যরাই এগুলো বিকল করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্যামেরাগুলো সচল না থাকায় অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টরা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে দৌলতদিয়া ঘাটের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয় সিসি ক্যামেরা। তবে স্থাপনের পর থেকেই অপরাধীদের গলার কাঁটা হয়ে দেখা দেয় ক্যামেরাগুলো। স্থাপনের পর থেকে ঘাটে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিসি ক্যামেরাগুলো কার্যকরী ভূমিকা রেখে আসছিল। কিন্তু ক্যামেরাগুলো বেশি দিন আলোর মুখ দেখতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পর থেকেই ঘাট সংশ্লিষ্ট অপরাধীরা তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্ন করতে ক্যামেরার ক্যাবল (সংযোগ তার) কাটা, ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে রাখাসহ বিভিন্নভাবে ক্যামেরাগুলো বিকল করে রাখতো। কিন্তু তৎকালীন পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় খুব কম সময়ের মধ্যেই তা মেরামত করে সচল করা হতো। এছাড়া ঘাটে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরাও ক্যামেরাগুলো সচল রাখতে এর প্রতি বিশেষ নজর রাখতেন। কিন্তু সিসি ক্যামেরা স্থাপনের চার মাসের মাথায় পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির রাজবাড়ী থেকে পাবনা জেলায় বদলি হয়ে যান। এরপর থেকে ক্যামেরাগুলোর প্রতি মনোযোগ কমে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিকল হয়ে পড়লেও এসব ক্যামেরা সচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।  দৌলতদিয়া ঘাটে লাগানো সিসি ক্যামেরা (ছবি: রাজবাড়ী প্রতিনিধি)

ঘাট সংশ্লিষ্ট অনেকেই অভিযোগ করেন, সিসি ক্যামেরা না থাকায় স্থানীয় দালাল চক্র নির্বিঘ্নে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়াল তৈরি হচ্ছে। এতে করে দীর্ঘ সময় যানবাহন আটকে থেকে ঘাটে সাধারণ যাত্রী ও চালকরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহান। আর এরই মধ্যে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র আরও সক্রিয়ভাবে তাদের কর্মকাণ্ড চালায়।

অভিযোগ রয়েছে, দৌলতদিয়া ঘাটে দালাল না ধরলে কোনও পণ্যবাহী ট্রাক ফেরির সিরিয়াল পায় না। এছাড়া ছিনতাই, পকেটমারের মতো ঘটনাও প্রতিনিয়ত ঘটছে।

একে ট্রাভেলস পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম জানান, ‘ঘাটের সিসি ক্যামেরাগুলো সচল থাকলে ঘাট এলাকার সব ধরনের অনিয়ম কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকে। অনেকটা অসুবিধায় থাকে অপরাধী চক্র। দ্রুত সিসি ক্যামেরাগুলো চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই।’দৌলতদিয়া ঘাট (ছবি: রাজবাড়ী প্রতিনিধি)

গণপরিবহনের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারদের কয়েকজন জানান, মাঝেমধ্যে ঘাটে অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে সিসি ক্যামেরাগুলো সচল থাকলে দালালসহ অনান্য অপরাধীদের সহজে চিহ্নিত করে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য আরও অনেক সহজ হবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সিসি ক্যামেরাগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে। এতে করে ঘাট এলাকার বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দ্রুত সময়ের মধ্যে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।’

ট্রাফিক ইন্সপেক্ট মো. আবুল হোসেন জানান, ‘গত মার্চ মাসে রাজবাড়ীর নতুন পুলিশ সুপার যোগদানের পরই তিনি ঘাটের সিসি ক্যামেরাগুলো সচলের উদ্যোগ নেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই সবগুলো সিসি ক্যামেরা সচল করা সম্ভব হবে।’

আরও পড়ুন- পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল শুরু