ফেরি চলে পানি সেচে!

কালনা ঘাট (ছবি- প্রতিনিধি)

মধুমতী নদীর কালনা ঘাটে একটি ফেরি জরাজীর্ণ হওয়ার পরও জোড়াতালি দিয়ে চলছে। এ ফেরির পাটাতনের অবস্থা খুবই নড়বড়ে। তলদেশেও রয়েছে অসংখ্য ছিদ্র। পারাপারের সময় এসব ছিদ্র দিয়ে ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে পানি ওঠে। দুই থেকে তিন বার নদী পারাপারের আগেই ফেরির পাটাতনের নিচটা ভরে ওঠে পানিতে। এতে শ্যালো পাম্প বসিয়ে পানি সেচে ফেরিটি চলাচল করে। ফেরি দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী ও যানবাহন চালকদের অভিযোগ, ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে এ ফেরি চললেও এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনও মাথাব্যথা নেই।

মধুমতী নদীর কালনা ফেরিঘাটের পশ্চিম পাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া ও পূর্ব পাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন তিনশ’ থেকে চারশ’ যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। এ ফেরিঘাট দিয়ে পার হয়ে পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস ও অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন বেনাপোল স্থলবন্দর, যশোর, খুলনা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় যাওয়া-আসা করে। অথচ এ ঘাটে আছে মাত্র দু’টি ফেরি, যার মধ্যে একটি খুবই জরাজীর্ণ, আর আরেকটি ইঞ্জিনের অভাবে বন্ধ রয়েছে।

কয়েকজন যাত্রী জানান, এ ফেরি দিয়ে ভয়ংকর আতঙ্ক নিয়ে পারাপার করতে হয়। তাদের ভোগান্তির ব্যাপারটা জেনেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। ঈদের আর মাত্র ক’দিন বাকি। এসময় ফেরিতে চাপও বেশি পড়ে। এখন ফেরি মেরামত বা নতুন ফেরি না নামানো হলে বেশি চাপে জরাজীর্ণ ফেরিটি ডুবে যাবে যে কোনও সময়।

কালনা ঘাট দিয়ে চলাচলকারী ট্রাকচালকরা জানান, এ ঘাটে ফেরি প্রায়ই অকেজো হয়ে পড়ে। ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। দুইটা ফেরির একটা অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এই ঘাটে আগে একটা ফেরি ডুবেছে। নতুন একটা ফেরি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিন বসানো হয়নি। ফেরির এই অবস্থার কারণে দুই পাড়ের অসংখ্য যানবাহনকে পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

সেচ দিয়ে ফেরির পানি ফেলা হচ্ছে (ছবি- প্রতিনিধি)

ফেরির চালক খালাসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৪ সাল থেকে ৪ নম্বর ফেরিটি এই ঘাটে চলছে। এর মধ্যে এর বডি মেরামত করা হয়নি। এখন ফেরিটির তলদেশের বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র ও উপরের অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ১৬ নম্বর ফেরিটি বন্ধ থাকায় ৪ নম্বরের ওপর চাপ বেশি পড়ছে। ফলে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি লোড দিতে হচ্ছে। সেচ দিয়ে ফেরি চালাতে হচ্ছে।

কালনা ফেরিঘাটের ইজারাদার মঞ্জুর হাসান বলেন, ‘এখানে যানবাহন পারাপারকারী ৪ নম্বর ফেরীটির তলদেশসহ বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র দেখা দিয়েছে। দুই-তিন বার পারাপার করার পর সেচ দিয়ে আবার চালাতে হচ্ছে। ততক্ষণে ফেরিঘাটের দুই পাড়ে জমে যায় শত শত যানবাহন। দ্রুত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে যেকোনও সময় আবার দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর ঘাটে বসে থাকা ১৬ নম্বর ফেরীটিতে নতুন করে বেশি শক্তির ইঞ্জিন বসানো না হলে যানবাহন পারাপার অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ গোপালগঞ্জ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী খ. মো. শরিফুল আলম বলেন, ‘একটি ফেরিতে ইঞ্জিনের সমস্যা, আরেকটিতে আরও কিছু সমস্যা আছে বলে শুনেছি। বিষয়টি ফেরি ডিভিশনকে জানানো হয়েছে। আশা করি, দ্রুত সমাধান হবে।’