খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অরুণ কান্তি মন্ডল জানান, ‘হাটে হাটে মেডিক্যাল টিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব টিম মূলত ক্ষতিকর স্টেরয়েড ইনজেকশন পুশ করা গরু হাটে আসছে কি না তা মনিটরিং করছে। পাশাপাশি কোনও গরুর চিকিৎসা প্রয়োজন হলে তা দেওয়া হবে এই টিমের কাজ। তবে হাটগুলো শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত কোনও প্রকার অসুস্থ গরু বা ছাগল পাওয়া যায়নি। আর ইনজেকশন পুশ করার আলামত দেখা যায় এমন কোনও গরুও আসেনি।’
তিনি আরও জানান, ‘ক্ষতিকর ইনজেকশন বা স্টেরয়েড পশুর দেহে আছে কি না তা জানার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করার কোনও ব্যবস্থাই খুলনায় নেই। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন আলামত বা প্রভাব দেখে এ বিষয়টি শনাক্ত করার চেষ্টা করা হয়।’
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) পরিচালিত জোড়াগেট পশুর হাট পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর মো. শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন জানান, ‘এ হাটে ক্ষতিকর ইনজেকশন বা ট্যাবলেট খাওয়ানো কিংবা অন্য কোনও ক্ষতিকর দ্রবণ খাওয়ানোর মাধ্যমে মোটাতাজা করা গরু আনা হলে তা শনাক্ত করার জন্য দুটি মেডিক্যাল টিম রয়েছে। কোনও প্রকার অসুস্থ গরু-ছাগল এ হাটে স্থান দেওয়া হবে না।’ তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার হাটটি উদ্বোধন করা হয়। এরপর শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত ৪২টি গরু বিক্রি করা হয়েছে। হাটে শুক্রবার পর্যন্ত ওঠা গরুর মধ্যে একটি গরুর দাম ৬ লাখ টাকা দাম হাঁকা হয়েছে।
নড়াইল থেকে আসা গরুর ব্যাপারি রবি শেখ বলেন, ‘৯ মাস আগে একটি দুর্বল গরু কিনেছিলাম। এতোদিন ধরে গম, ভুষি, কালাইয়ের ভুষিসহ উন্নতমানের খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে গরুটিকে মোটা তাজা করেছি। গরুটির দাম হেঁকেছি ৬ লাখ টাকা। শুক্রবার দুপুরে একজন সাড়ে ৩ লাখ টাকা দাম বলেছেন। আমি বিক্রি করতে আগ্রহী হইনি। দাম আরেকটু বাড়ার জন্য অপেক্ষা করছি। গরুটির খাবারের পেছনে দৈনিক অন্তত ৪০০ টাকা খরচ করতে হয়।’
এদিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রাশিদা বেগম জানান, পশুরহাটের কারণে জনবহুল এলাকায় নিরাপত্তা ও যানজট নিরসনে ৪৯৬ জন সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হাইওয়েতে গরুবাহী ট্রাক তল্লাশি করা হচ্ছে না। পশুর হাট সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পুলিশ ১৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। পশুর হাটে নিরাপত্তার জন্য ৬ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২৪জন ইন্সপেক্টর দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া প্রত্যেক পশুর হাটে ৫ জন সশস্ত্র পুলিশ, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা, মোবাইল টিম ও জনবহুল এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জোড়াগেট পশুর হাটে ১শ’ জন এবং ফুলবাড়িগেট পশুর হাটে ৫০ জন সশস্ত্র পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।
হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া ও শাহাপুর স্থায়ী পশুর হাট, আঠারো মাইল, চুকনগর, বটিয়াঘাটা উপজেলার খারাবাদ বাইনতলা, দাকোপ উপজেলার চালনা বাজার, বাজুয়া, পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালি, কাশিমনগর, গদাইপুর, বাঁকা, কয়রা উপজেলার আমাদি, হোগলা, ঘুগরাকাঠি, বামিয়া, হায়াতখালি, গিলেবাড়ি, ফুলতলা উপজেলা সদরের তাজপুর, রূপসা উপজেলার আইচগাতি আমতলা, পূর্ব রূপসার বাগমারা, পিঠাভোগ, তেরখাদা উপজেলার ইখড়ি কাটেঙ্গা, কেটলা গাজিরহাট, পথের বাজার, বারাকপুর ও এমএ মজিদ কলেজ মাঠ। সাপ্তাহিক স্থায়ী হাটে ৮টি জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ স্বাক্ষরিত এক দাফতরিক পত্রে হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। পুলিশ সুপারের নির্দেশাবলিতে বলা হয়েছে, মহাসড়কের ওপর কোনও রকম হাট বসবে না, জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন করতে হবে, নৌ ও সড়ক পথে ডাকাতের হামলা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য দ্রুত অপসারণ, কোরবানির পশুর কৃত্রিম সংকট হলে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
আরও পড়ুন- মিয়ানমার থেকে আসছে কোরবানির পশু, আরও ১০ হাজার আমদানির টার্গেট