চামড়া কেনাবেচার প্রস্তুতি চলছে নাটোরের আড়তগুলোতে

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চামড়া কেনাবেচার প্রস্তুতি চলছে নাটোরে আড়তগুলোতে। কোরবানির চামড়া রাখা, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিটি আড়তে চলছে সংস্কারের কাজ। সরেজমিনে নাটোর স্টেশন বাজার এলাকার চামড়া মার্কেট ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে। পাশাপাশি চামড়া সংগ্রহের জন্য আড়তদাররা যোগাযোগ করছেন ফড়িয়া, কুলি, শ্রমিক, ব্যাপারী এবং ক্রেতাদের সঙ্গে।

তবে অন্যান্য বছরের মতো এবারও নিজের পুঁজি খাটিয়ে চামড়া কেনার পর বিক্রির টাকা সময় মতো না পেলে সমস্যায় পড়ার শঙ্কাও কাজ করছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান আকু বলেন, ‘দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়া মার্কেট নাটোরে। এখানে শতাধিক আড়ত রয়েছে। প্রতিবছর পুরো উত্তরবঙ্গ এবং পূর্ব ও দক্ষিণ বঙ্গের আংশিক চামড়া নাটোর চামড়া মার্কেটে বেচাকেনা হয়।’

আড়তদার নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‘নাটোরে চামড়া ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্তরা হলো ফড়িয়া, ব্যাপারী, আড়তদার এবং ক্রেতা। কোরবানি দাতাদের কাছ থেকে চামড়া কেনে ফড়িয়ারা। জেলার বাইরে থেকে চামড়া কিনে আড়তে বিক্রি করতে আসে ব্যাপারীরা। আর আড়ত থেকে চামড়া কিনে ঢাকায় ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেন ক্রেতারা। ফড়িয়া আর ব্যাপারীরা নিজের পুঁজি খাটিয়ে নগদ টাকায় চামড়া কেনে। পাঁচশত টাকা মূল্যের একটি চামড়ার গাড়ি খরচ, কুলি খরচ, লবণ দেওয়া খরচ আর রক্ষণাবেক্ষণসহ আড়তের খরচ মিলিয়ে চামড়া রফতানির উপযোগী করতে আরও প্রায় হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু ক্রেতারা এই চামড়া কিনে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করার পর তারা সময় মতো টাকা পান না।’

এ প্রসঙ্গে চামড়া ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, তিনি দীর্ঘদিন থেকেই চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সঠিক সময়ে চামড়া বিক্রির টাকা না পাওয়ায় তার মতো অনেক ব্যবসায়ী ইতোমধ্যেই ব্যবসা পরিবর্তন করেছেন। তার নিজের কয়েক লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে দাবি করে তিনি আরও জানান, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা না পেলে আগামী বছর থেকে তিনিও চামড়া ব্যবসা বাদ দেবেন।

নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ এসব বিষয়ে তাদের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে জানান, প্রতিবছর নাটোর থেকে ৭ লাখের অধিক চামড়া ঢাকায় ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়। অথচ রফতানি সমস্যা, বিশ্ব বাজারে দাম কম ইত্যাদির কথা বলে চামড়া বিক্রির টাকা সময়মতো পরিশোধ করা হয় না।

এক প্রশ্নের জবাবে শরিফ বলেন, ‘কয়েক বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে চামড়া আমদানি করত। বর্তমানে শুধু চীন এই চামড়া কেনে। খদ্দের কম থাকায় মূল্য যাচাই করা যায় না। এর ওপর ট্রাম্প সরকার ১৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করায় চামড়ার দাম আরও কমেছে। ’ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়া মার্কেট খ্যাত নাটোরের চামড়া শিল্প রক্ষার স্বার্থে এ ব্যাপারে সরকার এবং ট্যানারি মালিকদের পদক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।