সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা

ফসল রক্ষা বাঁধ, কর্মসংস্থান ও যোগাযোগ ইস্যু ভোটে গুরুত্ব পাবে

হাওর থেকে পানি এখনও নামছে না (ফাইল ফটো)একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জের হাওরের উন্নয়ন সংক্রান্ত ইস্যুগুলো ভোটারদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করবে। হাওর এলাকার যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, জলমহালে জেলেদের অধিকার নিশ্চিত, বিদ্যুতায়ন, বেকারত্ব নিরসন, দারিদ্র বিমোচন, সহজ শর্তে কৃষিঋণ, নদী ও খাল খনন, সামাজিক নিরাপত্তা ও খাদ্য নিরাপত্তার মতো ইস্যুগুলো ভোটে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে হাওর এলাকার ভোটারদের মধ্যে।
এ বিষয়ে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, ‘গোটা হাওর এলাকা বাংলাদেশের অন্য জায়গা থেকে ভিন্ন। হাওরের যোগাযোগব্যবস্থা এখনও নৌকা নির্ভর। বর্ষাকালে হাওরবাসী পানিবন্দি অবস্থায় থাকেন। এ সময় মানুষের হাতে কোনও কাজ থাকে না। এতো বছর পরও হাওর এলাকায় কৃষিকাজ ও মাছ ধরা ছাড়া বিকল্প কর্মসংস্থান গড়ে ওঠেনি। তাই জেলার হাওর এলাকার আড়াই লাখের বেশি যুবক বেকার হয়ে পড়েছেন। প্রতি বছর বেকারদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এজন্য হাওরে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।’
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন, ‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক নির্মাণ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা দূর করতে হবে। উড়াল সড়ক নির্মাণ হলে সারা বছর মানুষ সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। ফলে বাড়বে পর্যটকদের আগমন। উড়াল সড়ক নির্মাণ করলে হাওরের পরিবেশের ওপর তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না। সাধারণ মানুষ এর সুফল ভোগ করবে।’
তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের কাউকান্দি গ্রামের মশিউর রহমান বলেন, ‘এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্বল অবকাঠামো। এছাড়া অভাবের কারণে অনেক শিক্ষার্থী শিশুকালেই রোজগারের কাজে জড়িয়ে পড়ে। এটি রোধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের টিফিনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি হলে সারা জেলার মানুষকে এর ফল ভোগ করতে হয়। কোনও অবস্থাতেই যেন ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে কেউ অনিয়ম ও দুর্নীতি করতে না পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’
ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাসেল তালুকদার বলেন, ‘হাওরের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। সারাদেশের মানুষের রোজগার বাড়লেও হাওরের মানুষের আয় এখনও বাড়েনি। তাই অগ্রাধিকারভিত্তিতে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রকল্প নিতে হবে।’
জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল হাদি বলেন, ‘হাওর এলাকায় আবাসিক স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তাহলে হাওর এলাকায় শিক্ষিতের হার ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে।’
তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের পৈন্ডুপ গ্রামের দীপক তালুকদার বলেন, ‘হাওর এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থার সুবিধা অনেক কম। বর্ষাকালে গৃহবন্দি অবস্থায় মানুষ বসবাস করেন। এজন্য সবার আগে হাওর এলাকার যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।’
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে বলেন, ‘হাওর এলাকার উন্নয়নের জন্য মানুষের চাহিদারভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। তাহলে মানুষের সার্বিক উন্নয়ন হবে। বিচ্ছিন্নভাবে উন্নয়ন করলে এগুলো মানুষের কোনও কাজে আসবে না।’