জামালপুরে শীতের লেপ তোশক তৈরিতে ব্যস্ত ধনুকররা

3333333

দেখতে দেখতেই আবারও চলে এলো শীতের হাওয়া। হেমন্ত অর্ধেক শেষ, অগ্রাহায়নের বাতাসে পৌষের আনাগোনা। উত্তর দিক থেকে হিমালয় ছোঁয়া হিমেল হাওয়ায় সকালের সূর্ তেমন একটা তেজ দেখাতে পারছে না। তাই শীতেও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে স্থানীয়রা। শীত যতই ঘনিয়ে আসছে লেপের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় ততই বাড়ছে, ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জামালপুর শহরসহ অন্যান্য উপজেলার ধনুকররা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জামালপুর শহরের লেপ তোশকের দোকানগুলোতে কারিগররা একটার পর একটা লেপ তোশক বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কথা বলার সময় নেই তাদের। জামালপুর শহরের সকাল বাজারের লেপ তোশকের কারিগর ও দোকান মালিক মো. ছানোয়ার হোসেন, সকাল বাজারের তালুকদার মার্কেটের কারিগর ও দোকান মালিক মো. ওসমান আলী, একই মার্কেটের কারিগর ও দোকান মালিক মো. ইকবাল হোসেন জানান, কয়েকদিন থেকে শীত পড়ায় মানুষ শীতবস্ত্রের প্রতি ঝুঁকছে। প্রতিদিন আমাদের এখান থেকে ১০ থেকে ১২টা লেপ তোশকের অর্ডার হয়ে থাকে। তবে এ বছর কাপড় ও তুলার দাম বৃদ্ধি হওয়ায় খরচ একটু বেশি হচ্ছে।

আমাদের এখানে শিমুল তুলা ৩৫০ থেকে ৪০০টাকা, কার্পাস তুলা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, গার্মেন্টেসের তোলা ৬০০ থেকে ১০০ টাকা। আবার কাপড়ের দাম ৫৫ থেকে ৭০ টাকা। সব মিলিয়ে একটি লেপ বানাতে ৮০০ থেকে শুরু হয়ে বড় লেপ ২ হাজার ২০০ টাকাও লাগছে। আবার একটু উন্নতমানের লেপ বানাতে গেলে খরচ একটু বেশি হয়।

1111111

তবে জামালপুর শহরের সকাল বাজারের লেপ তোশকের কারিগর ও দোকান মালিক মো. ছানোয়ার হোসেন বললেন, ‘এখন দেশে এপেক্স এর ফোমের তোষক এবং বিদেশি কম্বল আসাতে আমাদের ব্যবসা খারাপ দেখা দিয়েছে। এছাড়া সস্তায় বিদেশি পুরাতন কম্বল আসছে, আমাদের ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে।’

এই দোকানের আরেক ক্রেতা মোছা. নাসরিন আখতার বললেন, ‘পুরাতন কাপড়ের দোকানে অনেক সময় ভালো কম্বল পাওয়া যায়। সেখান থেকে দেখে একটি ভাল মানের কম্বল কিনতে পারলে সেটা লেপের চেয়ে অনেক ভাল হয়, দামও কম পড়ে ও টেকেও অনেক বেশি।

ঠিক একই কথা বললেন মো. ইকবাল হোসেন। তিনিও কম্বল ব্যবহারের  অনেক সুবিধার কথা বলেছেন।

জেলার ইসলামপুর বাজারের রাশেদ বেডিং হাউসে মালিক রাশেদ মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন থেকে শীত একটু বেশি পড়ায় মানুষ শীতবস্ত্রের প্রতি ঝুঁকছে। প্রতিদিন আমার এখান থেকে ১২ থেকে ১৫টা লেপ তোশকের অর্ডার হয়ে থাকে। তবে এবছর কাপড় ও তুলার দাম বেশি হওয়াতে খরচ একটু বেশি পড়ছে।’

22222222

তিনি জানান, এখানে শিমুল তুলার কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, কার্পাস তুলা ২০০ থেকে ২৮০ টাকা, গার্মেন্টেসের তুলা ৫০০ থেকে ১০০ টাকা, আবার কাপড়ের দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সব মিলিয়ে একটি লেপ বানাতে এক হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা পড়ে যায়। আবার একটু উন্নতমানের বানাতে গেলে খরচ একটু বেশি পড়ে।

ইসলামপুর বাজারের লেপের কারিগর আব্দুর রহিম বলেন, ‘একটি লেপ বানালে ২০০ থেকে ২৮০ টাকা পাই। এখন তো তেমন শীত পড়েনি, তবে শীত বেশি পড়লে দম ফেলার সময় থাকে না।’

রাব্বী বেডিং স্টোরের রবিউর ইসলাম বলেন, ‘সারা বছর আমাদের তেমন ব্যবসা হয় না। শীতের সময় একটু ব্যবসা ভাল হয়। আবার শীতের শুরুতেই লেপ বেশ ভালই বিক্রি হয়।’  

ইসলামপুর উপজেলার গুঠাইল বাজারের মালেক লেপ তোশকের দোকান মালিক আব্দুল করিম শেখ বলেন, ‘যত গুড় তত মিষ্টি। আমাদের এখানে লেপ বানাতে ৮০০ টাকা থেকে শুরু হয়, ওপরে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।’  

এবারের বিক্রির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বারের তুলনায় এবার শীত এখনও না পড়ায় বিক্রি একটু কম হলেও সময় তো পাইতেছি না। তবে দ্রুত আমাদের বিক্রি আরও বাড়বে বলে আমরা মনে করছি।’

ইসলামপুরের গুঠাইল বাজারে বেডিং স্টোরে লেপ ও তোশক বানাতে আসা দম্পতি ক্রেতা মাসুমা জাহান মিলি ও রানী মনি, আব্দুল মালেক ও সুলতান মিয়া জানান- এখনও তেমন একটা শীত পড়েনি, অনেক আগে লেপ বানিয়েছিলাম, সেটার তুলা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আগের তুলা আর নতুন তুলা মিশিয়ে নতুন করে লেপ বানাবার জন্য আইছি।’