সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাপক চাহিদা থাকায় হিলিসহ আশপাশের এলাকা দিয়ে সম্প্রতি দেশীয় খেজুরের গুড় ভারতে পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতে পাচারের সময় ৯৫ কেজি খেজুরের গুড় জব্দ করে বিজিবি। এছাড়াও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাকচালকরা পণ্য খালাস করে ভারতে ফেরার পথে গুড় নিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি পাসপোর্টে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় যাত্রীরাও দেশে ফেরার পথে গুড় নিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে, ভারতে গুড়ের ব্যাপক চাহিদার কথা মাথায় রেখে কেউ কেউ পাসপোর্ট যাত্রীদের মাধ্যমে ভারতে খেজুরের গুড় পাচার করছেন।
ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা এক যাত্রী ও বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় একজন ট্রাকচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ভারতেও খেজুরের গুড় উৎপাদন হয় কিন্তু সেই গুড়ের স্বাদ আর বাংলাদেশে তৈরি খেজুরের গুড়ের স্বাদের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। ঠিক যেমনটি রয়েছে ইলিশ মাছে। আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে পিঠা পায়েশ তৈরি করা হয়। সেগুলোতে গুড় লাগে। তাই বাংলাদেশি খেজুরের গুড়ের বেশ চাহিদা রয়েছে ভারতে। বাংলাদেশে বেড়াতে এসে দেশে ফিরে যাওয়ার পথে নিজের ও পরিবারের জন্য দুই থেকে পাঁচ কেজি করে খেজুরের গুড় নিয়ে যায় ভারতীয়রা। পণ্য খালি করে দেশে ফিরে যাওয়ার পথে খেজুরের গুড় নিয়ে যান গাড়িচালক নিজেও।
বাংলা হিলি বাজারের খেজুরের গুড় বিক্রেতা নিরঞ্জন বসাক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আমি আব্দুলপুর, নাটোর, আড়ানি, বানেশ্বর এলাকা থেকে খেজুরের গুড় নিয়ে হিলিতে পাইকারি এবং খুচরা বিক্রি করে থাকি। গড়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি গুড় বিক্রি করে থাকি। স্থানীদের পাশাপাশি ভারতের অনেক মানুষ যারা পাসপোর্টে বাংলাদেশে আসে বা আবার যারা এলসির পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে আসা চালক ও হেলপারর বাড়ি ফিরে যাওযার পথে বাজার থেকে খেজুরের গুড় কিনে নিয়ে যায়। এর কারণ হলো আমাদের দেশের খেজুরের গুড় ভারতের গুড়ের চেয়ে অনেক ভালো। বাংলাদেশ থেকে এভাবে গুড় পাচার হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তারা আমাদের মতো করে গুড় তৈরি করতে পারে না। এছাড়াও ভারতে গুড়ের দামও বেশি। আমাদের দেশে প্রকারভেদে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে খেজুরের গুড় বিক্রি হলেও তাদের দেশে ১০০ রুপি দরে বিক্রি হয়।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশের খেজুরের গুড় ভারতের গুড়ের চেয়ে অনেক ভালো মানের ও স্বাদ ভালো হওয়ায় ভারতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যা রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হতো।’ কিন্তু ভারত অভ্যন্তরে কাস্টমসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পদায়ন না থাকা এবং উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ অফিস না থাকায় এসব পণ্য রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অবৈধপথে খেজুরের গুড়সহ বিভিন্ন পণ্য ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে।’
হারুন উর রশীদ আরও বলেন, ‘এছাড়াও কোনও পণ্য রফতানি করা হলেও সেসব পণ্য বন্দরে আটকে রেখে তার নমুনা ও কাগজপত্র অনুমোদনের জন্য ভারতের কলকাতা ও দিল্লিতে পাঠানো হয়। সেখানে টেস্ট হয়ে কাগজপত্র অনুমোদন হয়ে আসতে আসতে ৫-৭ দিনের মতো সময় লাগে। এ কারণে রফতানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হওয়ার কারণে, এসব পণ্য রফতানি করতে নিরুৎসাহিত বোধ করেন। শুধুমাত্র খেজুরের গুড় নয় আরও বেশ কিছু দেশীয় পণ্য রয়েছে যেসব পণ্যের ভারতের বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম রয়েছে। বন্দরের বিরাজমান সমস্যাগুলো ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা গেলে বন্দর দিয়ে বৈধপথে খেজুরের গুড়সহ অন্যান্য সামগ্রী রফতানি করা যাবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় যেমন বাড়বে, তেমনি ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন।’বিজিবির হিলি আইসিপিক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার চাঁন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘আমি সম্প্রতি এখানে জয়েন্ট করেছি, তবে হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে খেজুরের গুড় পাচারের কোনও ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে যে কোনও ধরনের পণ্য পাচারসহ সব ধরনের অপরাধ দমনে বিজিবি সবসময় সতর্কাবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও সীমান্তে বিজিবির পাশপাশি সিসি ক্যামেরা স্থাপন রয়েছে। এতে করে হিলি সীমান্ত দিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পাদন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।