উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, আইলা পরবর্তী জমিতে লবণাক্ততার কারণে ৬০ হাজার বিঘার বেশি জমিতে লবণ পানির চিংড়ি চাষ হয়েছে। এ বছর উপজেলায় লবণ পানির চিংড়ি চাষ কমে নেমেছে ৩৭ হাজার বিঘা জমিতে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, দীর্ঘদিন নদী থেকে জোয়ারের লবণ পানি তোলায় জমিতে পলি পড়ে উচ্চতা বেড়ে গেছে। এছাড়া ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কারণে চিংড়ির উৎপাদনও এখন কমে গেছে। ফলে চিংড়ি চাষীদের প্রতি বছর লোকসান গুণতে হচ্ছে। তিনি জানান, চিংড়িতে ক্ষতি হওয়ায় জমির মালিকরা এখন বাপ দাদার পেশায় ফিরে এসে আমন শেষে বোরো চাষ শুরু করেছেন।
চিংড়ি চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া আসামদিনাবাদ গ্রামের আলতাফ হোসেন ও পূর্ব মঠবাড়ী গ্রামের দাউদ গাজী জানান, জমির উচ্চতা বেড়ে গেছে এবং চিংড়িতে ভাইরাসের কারণে যে পরিমাণ চিংড়ির রেণু পোনা ছাড়া হয় তার ১০ ভাগও পাওয়া যায় না। তাই আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই এলাকায় লবণ পানির চিংড়ি চাষ কমে যাবে বলে তাদের ধারণা।
গোবরাপূর্ব চক গ্রামের অ্যাডভোকেট আবু জাফর বলেন, জমিতে আমন ধান চাষ শেষে বোরো ধান চাষ করে কৃষকরা এখন চিংড়ির চেয়েও লাভবান হচ্ছেন। কেননা ধানসহ খড় পাওয়া যায় এবং তা গরুর খাদ্য ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
বোরো চাষী মহারাজপুর গ্রামের মোতালেব, আজিজুল জানান, যদিও শুকনা মৌসুমে বোরো চাষে খরচ বেশি, তবুও লাভ হয়। ধানও বেশি হয় এবং খড়কুটা বিক্রি করা যায়।
তবে যে জমিতে লবণ পানি ঢোকা রোধ করতে না পারার অভিযোগ ছিল একসময় এবং ধানের ফলন হতো না বা কম হতো বলে স্থানীয়রা লবণ পানি আরও এনে চিংড়ি চাষে ঝুঁকে পড়লো এক দশকের মধ্যে সেই জমিগুলো ধান চাষের জন্য এত উপযুক্ত হলো কী করে? এ প্রশ্নের উত্তরে কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসার মিজান মাহমুদ জানান, এক সময় লবণ পানির চিংড়ি চাষ এই উপজেলায় দ্রুতগতিতে বেড়েই চলছিল। কিন্তু তাদের প্রথম থামায় চিংড়ির ভাইরাস। এই ভাইরাসের কারণেই এক দশক চিংড়িচাষী সেজে থাকা কৃষকরা ক্ষতি এড়াতে আবারও আমনসহ বোরো ধান চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। তবে এ ব্যাপারে তাদের সাহায্য করেছে লবণ সহিষ্ণু ধানের জাতের উদ্ভাবনী সাফল্য।
তিনি বলেন, লবণ সহিষ্ণু জাতের বীনা ১০, বীনা ৮, ব্রি ৬৭ ও ব্রি ২৮ জাতের ধানের ফলন বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তাছাড়া একই জমিতে আমনসহ বোরো ধান চাষ করে তার খড়কুটা বিক্রি করে খরচ কমে যাওয়ায় প্রতি বছর বোরো চাষ বাড়তে শুরু করেছে এবং চলতি মৌসুমে বোরো ফসলের উৎপাদন ভালো হলে আগামীতে চাষ বাড়বে বলে তিনি ধারণা করেছেন।