স্বীকৃতি না পাওয়া বীরাঙ্গনাদের মধ্যে রয়েছেন রেনু বালা, মায়া সূত্রধর, বাণী পাল, কান্তা পাল, রাশমুনি সূত্রধর, কালীদাসী পাল, সুষমা পাল, সন্ধ্যা পাল, ক্ষান্ত বালা পাল। এদের মধ্যে বাণী পাল ও কান্তা পাল মারা গেছেন।একাত্তরের সেই দুর্বিসহ যন্ত্রনা, সামাজিক বঞ্চনার পাশাপাশি দুঃখ-দুদর্শা আর অভাব-অনটনের মধ্যেই চলছে জীবিতদের জীবন। সরকার বীরাঙ্গনা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও সেই তালিকায় নওগাঁর রাণীনগরের ১০ জন বীরাঙ্গনার নাম তালিকাভূক্ত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তাদের পরিবার ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
পাক-বাহিনীর নির্যাতনের স্বীকার কালীদাসী পাল জানান, ‘ওইদিন সকালে যখন আমাদের গ্রামে পাকিস্তানিরা আসে তখন আমার স্বামীসহ সবাই বাড়ির দরজা লাগিয়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করি। কিন্তু স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগীতায় দরজা ভেঙে আমার স্বামীকে টেনে হিঁচড়ে পাঞ্জাবিরা রাইফেল দিয়ে মারতে মারতে যোগেন্দ্রনাথের বারান্দায় নিয়ে যায়। স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাইতে গেলে আমার কথা না শুনে চোখের সামনে আমার স্বামীসহ ৫২ জনকে হত্যা করে। এসময় আমার উপরও তারা নির্যাতন চালায়।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না।’
প্রত্যক্ষদর্শী সুষমা পাল বলেন, ‘ওইদিন সকাল ৯টার দিকে পাকিস্তানিরা আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে সুরেশ্বর পালের বাড়িতে লাইন করে রাখে। এসময় পাকিস্তানিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নির্যাতন চালায়। আমি ছোট ছেলেকে নিয়ে পাশের বাড়ির মাটির ডাবরের ভেতর আশ্রয় নেই। বাচ্চার কান্না পাকিস্তানিরা শুনতে পেয়ে আমাকে সেখান থেকে বের করে আনে এবং আমার ওপর নির্যাতন চালায়।'
আতাইকুলা গ্রামের শহীদ পরিবারের সদস্য গৌতম পাল জানান, ‘স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ দশক সময় অতিবাহিত হলেও মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাঁথা এই গ্রামের শহীদ ও বীরাঙ্গনার পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় কোনও সুযোগ সুবিধা পাননি। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়ও তাদের নামের স্থান হয়নি। বড় পরিতাপের বিষয় যে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরও এ দফতর সে দফতর ঘুরেও আমাদের কোনও একটা সুরাহা হলো না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ‘এই গ্রামের বীরাঙ্গনাদের দ্রুত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করবো। আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বরাবর পাঠিয়েছি। আশা রাখি সরকার বিষয়টি সুদৃষ্টি সহকারে দেখবে।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম বলেন, 'বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও বীরাঙ্গনাদের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। আতাইকুলা গ্রামের ১০ বীরাঙ্গনার ব্যাপারে নিয়ম মাফিক যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যেন তারা তালিকাভূক্ত হতে পারেন সে ব্যাপারে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’