সোমবার (১৫ এপ্রিল) সকালে উপজেলার পাথারিয়া,শিমুলবাঁক,পূর্ব বীরগাঁও ও দরগাপাশা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে দমকা বাতাসসহ কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়। একমাত্র বোরো ফসল নষ্ট হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিমুলবাক গ্রামের কৃষকের। শিমুলবা জামাইকাটা হাওরের ৩০০ হেক্টর জমির পাকা ধান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে পাথারিয়া ইউনিয়নের ১৫০ হেক্টর,শিমুলবাঁক ইউনিয়নের ৪০০ হেক্টর, পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের ১০০ হেক্টর ও দরগাপাশা ইউনিয়নের ১০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আক্রান্ত জমির শতভাগ ধান জমিতেই ঝরে পড়েছে। অথচ দু’দিন আগেও এসব হাওরের জমিতে পাকা ধান দুলছিলো।
কৃষক আনফর আলী বলেন, ‘পরের জমি বর্গাচাষ করে সেই আয় দিয়ে আমি সংসার চালাই। আমার এখন কিছু নাই। পরিবারের ১২ জন লোক আছে। ধান ক্ষেতের এ অবস্থা দেখে আমার শরীর অবশ হয়ে গেছে। ঋণ করে কৃষিজমি করেছিলাম। এখন ঋণ দিবো কীভাবে আর সংসার চালাবো কীভাবে জানিনা। ৩৫ কেয়ার জমি করে এক ছটাক ধানও কাটতে পারিনি। সব শিলে নষ্ট করেছে। এখন আমার ভাত খাওয়ার চাল নাই। সরকার যদি সাহায্য না করে তাহলে বাঁচার কোনও উপায় নাই।’
কৃষক মো. এমদাদুল হক জানান, তিনি ১৬ কেয়ার জমিতে ধান আবাদ করেছিলেন। দুইদিন আগেও জমিতে পাকা ধানের শীষ বাতাসে দোল খেয়েছে। আর এখন শুধুমাত্র ধান গাছের কাণ্ড পড়ে আছে। কোনও ধান নেই, আছে শুধু মরা হলুদ রঙ্গের পাতা। সব ধান জমিতে ঝরে গেছে।
কৃষক নূর উদ্দিন বলেন, ‘আমি একজন বর্গাচাষী, আমার নিজস্ব কোনও জমি নেই। ৪২ হাজার টাকা খরচ করে ৪২ কেয়ার জমিতে ধান রোপন করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছিলো। ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারলে ২০০ মণ ধান পেতাম, এখন দুই মণ ধানও পাবো না। শিলাবৃষ্টি সব ফসল নষ্ট করে দিয়েছে।’
তেহকিয়া গ্রামের জহুর মিয়া বলেন, ‘শিলা বৃষ্টিতে সবকিছু উজার করে নিয়ে গেছে। এখন সরকারি সাহায্য ছাড়া চলার কোনও উপায় নেই।’
শিমুলবাক ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুয়েল রানা বলেন, ‘এখানকার শতভাগ ফসল শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। হাওরে এতো বেশি শিলাবৃষ্টি হয়েছে যে একটি ধানও জমি থেকে কৃষক সংগ্রহ করতে পারবেন না। অনেক কৃষক ঋণ করে জমিতে ধানচাষ করেছেন, তারা আরও বেশি বিপদে পড়েছেন। এই এলাকায় একমাত্র বোরো ফসল হয়। অন্য কোনও ফসল উৎপাদন হয় না। তাই কৃষকরা আরও বেশি বিপদে পড়েছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তারা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত দেবেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. বশির আহমেদ সরকার বলেন, ‘চারটি ইউনিয়নের শিলাবৃষ্টিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করবে সরকার।’