দিনাজপুরে ইটভাটার প্রভাবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, দিশেহারা কৃষক

 

ধোঁয়ায় ঝলসে যাচ্ছে ভুট্টার গাছদিনাজপুরে ইটভাটার ধোঁয়ায় লিচু, টমেটো, কলা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছে, ফসলের নমুনা পরীক্ষার পর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।

দিনাজপুরের সদর উপজেলার পূর্ব রামনগর এলাকায় হঠাৎ করে ফসল ঝলসে যেতে শুরু করেছে। গাছে ধরা ছোট ছোট লিচু ঝড়ে যাচ্ছে, ঝলসে যাচ্ছে ক্ষেতে আসা ভুট্টার মোচা। মরে যাচ্ছে টমেটোর গাছ, আর কলা গাছের চেহারা এমন যেন আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলা হয়েছে। কৃষকরা দাবি করেছেন, ফসলী জমির পাশেই গড়ে উঠা আরইবি নামে একটি ইটভাটার ধোঁয়া কারণেই ফসলের এমন ক্ষতি হচ্ছে।

লিচু বাগান মালিক শিবপুর সরদারপাড়া এলাকার আলহাজ্ব আজিজার রহমান বলেন, ‘ভাটার কারণে লিচু কালো হয়ে ঝড়ে গেছে। কৃষি কাজ ও বাগান থেকে আয় করেই পরিবার-পরিজনের জীবিকা নির্বাহ করেন। এভাবে ভাটার কারণে যদি ফসল ও বাগানের ক্ষতি হয় তাহলে আমরা কি করে খাবো? চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে, দেখি কি করে।’

দক্ষিণ শিবপুর গ্রামের আইনুদ্দিন বলেন,  ‘এই সিজনে শুধু লিচু ফল এক মাস আগে কিনেছি দেড় লাখ টাকা দিয়ে। পরিচর্যা, পানি সেচ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচও হয়েছে। এখন হঠাৎ করেই লিচু থোকার বোটা শুকিয়ে ঝড়ে যাচ্ছে। এখন আমি সর্বশান্ত হয়ে গেছি। ভাটার কারণেই এই ক্ষতি হয়েছে। আমার ক্ষতিপূরণ প্রয়োজন।’

ধোঁয়ায় বিবর্ণ টমেটো গাছপূর্ব রামনগর মুশহর পাড়া এলাকার ধীরেন ঋষি বলেন, ‘ধার ও লোন নিয়ে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ভুট্টা আবাদ করেছি। এখন ভুট্টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন আমার বড় চিন্তা অন্যের টাকা, জমির টাকা ও লোন শোধ করবো কিভাবে? ভাটার কারণেই এমন ক্ষতি হয়েছে।’

শিবপুর সরদারপাড়া এলাকার মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমার বাগানে ২০০’র বেশি কলাগাছ আছে। এর আগের বছরও কলাগাছের ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু এবারের ক্ষতি অনেক বেশি। কোনও গাছই বাকি নেই, কলা একটাও পাওয়া যাবে না। এই জমিগুলোতে তো আবাদ করা হবে না, তাহলে আমরা চলবো কিভাবে? ’

অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ৪ নম্বর শেখপুরা এলাকার চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘লিচু, ভুট্টা, কলা ও টমেটোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভাটার ধোঁয়ার কারণেই এটি হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।’

দিনাজপুর কৃষিপণ্য জনমূল্য কমিশনের সদস্য সচিব যাদব চন্দ্র রায় বলেন, ‘আইন রয়েছে ফসলী জমি ও বাড়িঘরের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। এই ফসলের জমির মাঝেই ইটভাটা থাকার কারণে এই ক্ষতি হয়েছে এবং আগামী বছরগুলোতেও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই ভাটাগুলোর ব্যাপারে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আরইবি ভাটার ম্যানেজার সুনীল কুমার রায় বলেন, ‘আমাদের ভাটাটি জিকজ্যাক। এই ভাটার ধোঁয়া দিয়ে ফসলের ক্ষতি হওয়ার কথা না। লিচুতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগের কারণে এটি হতে পারে। এরপরও বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা হোক।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আকলিমুজ্জামান বলেন, ‘এমন একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ফসলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তা ল্যাবে পাঠানো হবে। যদি ভাটার কারণে এটি হয়েছে বলে প্রতিবেদন আসে তাহলে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। সেখানকার কোন কোন কৃষকের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটিরও তালিকা করা হবে।’

এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম বলেন, ‘আদালতের মাধ্যমে ইটভাটাগুলো চলছে।  আমাদের করার কিছু নেই।’