কৃষকদের ধান কেটে দিলেন শাবি শিক্ষার্থীরা

কৃষকদের জমির ধান কেটে দিচ্ছেন শাবি শিক্ষার্থীরাচলতি বছরে ধানের দাম কম হওয়ায় শ্রমিক দিয়ে মাঠ থেকে ধান সংগ্রহ করে পোষাতে পারছেন না কৃষকরা। দাম কম হওয়ায় ধানক্ষেতে আগুন ধরিয়ে নওগাঁ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা জেলাসহ দেশের বিভিন্নপ্রান্তে কৃষকরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এমন অবস্থায় ধান কেটে কৃষকদের সহায়তার পাশাপাশি তাদের প্রতিবাদের সঙ্গেও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী আবাসিক ছাত্রীহলের পাশের আব্দুল মতিন নামের এক কৃষকের একুশ শতাংশ জমির ধান কেটে দেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশে বড় ধরণের ক্ষতি হয়, বিশেষ করে আবাদি ফসলের কৃষকেরা বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ৩২ লাখ মেট্রিকটন চাল আমদানি করে। যেকারণে পরে দেশে ধানের মজুত বেড়ে যায়। এ জন্য বর্তমানে কৃষকেরা ধানের দাম পাচ্ছেন না। প্রতি মণ ধান তাদের ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে মণপ্রতি খরচ হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা। এমন অবস্থায় কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে আমরা কাজ করছি।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাব্বির আহমেদ বলেন, কৃষিকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নতির কথা ভাবা যায় না। বর্তমানে দেশে ধানের যে দাম, তাতে কৃষকেরা বাঁচবে কিভাবে? আর কৃষকরা না বাঁচলে, দেশ বাচঁবে কিভাবে? আমরা মনে করি সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পেছনে না ছুটে একটু কৃষির প্রতি নজর দেওয়া উচিত। আসলে দেশের সমস্যাগুলো আমাদের দ্বারা তৈরি হয়। আর এর সমাধান আমদেরকেই করতে হবে।

কৃষকদের জমির ধান সংগ্রহে সহায়তা করছেন শিক্ষার্থীরাএসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী টিলারগাঁও এলাকার কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, আমাদের একবিঘা জমিতে যা খরচ হয়, সে তুলনায় ধানের দাম কম হওয়ায় আমরা খুব ক্ষতির মুখে পড়েছি। যে ধান হয় তার বাজারমূল্য খরচের তুলনায় অনেক কম। আমাদের তো কৃষি কাজের বাইরে কিছু করার নেই, যে এতে সুবিধা হচ্ছে না অন্য কিছু করি। আপনারাই বলুন, কৃষকের তো জমি থেকে নিয়ে বাঁচতে হবে, এমন হলে আমরা কোথায় যাবো?

তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি কৃষকের প্রতি সরকারের একটু নজর দেওয়া উচিত। বর্তমানে অতিরিক্ত ধান/চাল বাইরে থেকে আমদানি না করার আহ্বান জানাই। এটা হলে কৃষকেরা বাঁচবে, আর কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ।

প্রসঙ্গত, দেশে এ বছর অন্য বছরগুলোর তুলনায় ধানের দাম অনেক কম। অতিরিক্ত চাল বাইরে থেকে আমদানি করায় দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। যার জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের দরিদ্র কৃষকরা।