জানা যায়, গত ১৭ মে দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নের গজপুরী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের একটি পিঠালী বা গামার গাছ ঝড়ে রাস্তার ওপর কিছুটা হেলে পড়ে। এতে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে মালিক গাছটি কাটার জন্য স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী বাবুল হোসেনকে দায়িত্ব দেন। প্রথমে হেলে পড়া গাছের ডালপালা কাটা হয়। এতে করে গাছটির বেঁকে যাওয়া মাথা পুনরায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তখন শ্রমিকরা ভয় পেয়ে গাছ কাটা বন্ধ রেখে চলে যান।
স্থানীয়রা জানান, ৫-৬ বছর আগেও একইভাবে গাছটি পড়ে গিয়েছিল। ডালপালা কেটে দেওয়ার পর গাছটি উঠে দাঁড়ায়। তবে এ স্বাভাবিক ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে স্থানীয় একটি অসাধু চক্র। তারা বিষয়টিকে অলৌকিক বলে উপস্থাপন করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।
রাতারাতি ওই চক্রটি গাছের চারপাশে লালসালু কাপড় দিয়ে ঘেরাও করে তুফান পীরের কথিত মাজার তৈরি করে। তারা এলাকাবাসীর মধ্যে ভুল তথ্য দিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণাও চালাচ্ছে।
মাজারের খাদেম হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ভাই ইসমাইল হোসেন এবং মুরিদ হিসেবে স্থানীয় কিছু লোক মাজারের দেখভাল করছেন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অসাধু চক্রের প্রচারণার ফাঁদে পড়ে আশপাশের এলাকা ও দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন এসে মাজারে মানত করা শুরু করেছেন। অনেকে কথিত মাজারে এসে টাকা পয়সা ও অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্যাদি দান করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে কথিত মাজারে লোকজনের বেশ উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে মোম ও আগরবাতি জ্বেলে কয়েকজন কাজ করছিলেন। অনেককে সেখানে টাকা-পয়সা দিতেও দেখা গেছে। সকাল ও সন্ধ্যায় এসে মাজার থেকে সংশ্লিষ্টরা টাকা নিয়ে যান বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে মাজারের কথিত খাদেম ইসমাইল হোসেনকে এলাকায় গিয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় নুর ইসলাম, ট্রাক ড্রাইভার মানিক, যুবক অরুণ রায়, আনারুল ইসলাম ও ইয়াকুব আলী জানান, মাজার এলাকায় প্রাচীন কোনও কিছু ছিল না, এখনও নেই। কোনোকালে সেখানে কবর ছিল বলেও আমরা শুনিনি। তারপরও রাতারাতি কীভাবে এটি মাজারে পরিণত হলো, তা বুঝতে পারছি না।
দেবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র আরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘একটি চক্র মানুষের সঙ্গে প্রতারণার লক্ষ্যে মাজারের নাম দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে।’
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান বলেন, ‘একটি গাছকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কিছু লোক মাজার গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। স্থানীয়দের সচেতন করে কথিত মাজার প্রতিষ্ঠা থেকে বিরত থাকার কথা বলেছি। তারপরও যদি অসাধু চক্রটি সরে না আসে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’