হালদায় এবার মাত্র ৭ হাজার কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ!

হালদা নদীতে সংগৃহীত মাছের ডিম

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে এবছর মাত্র ৭ হাজার কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন ডিম আহরণকারীরা। বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন হালদা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। শনিবার (২৫ মে) রাতে হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মা-মাছেরা ডিম ছাড়া শুরু করলে ডিম সংগ্রহে নামেন স্থানীয় জেলেরা। তবে এর পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অনেক কম। গত বছর সংগ্রহ হয়েছিল প্রায় ২২ হাজার কেজি মাছের ডিম।

জেলেরা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল সাতটার দিকে নমুনা ডিম ছেড়ে পানির অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছিল মা মাছগুলো। এর ১৪ ঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে নদীতে ডিম ছাড়া শুরু করে কার্পজাতীয় মা-মাছেরা। এ ডিম দেখতে পাওয়ার পর থেকে নদীতে শুরু হয় ডিম সংগ্রহের উৎসব। রাত যত বাড়ে ততই ডিম সংগ্রহ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

হালদা নদীতে মাছের ডিম সংগ্রহ করছেন জেলেরা

হালদা পাড়ের গড়দুয়ারা গ্রামের কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, রাত ৯টার পর থেকে নদীতে ডিম পাওয়া যায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ডিম আহরণও বেড়েছে। এসময় ডিম আহরণকারীরা প্রত্যেকে এক বালতি থেকে চার বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেন। প্রতিটি বালতিতে ১০ থেকে ১২ কেজি করে ডিম সংগ্রহ করা যায়।


তবে তার আক্ষেপ, এবার ডিম সংগ্রহের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অনেক কম।
কামাল উদ্দিন বলেন,‘আমরা আশা করেছিলাম, এবার অনেক বেশি ডিম আহরণ করা যাবে। কিন্তু শনিবার যে পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে তা গত বছরের তুলনায় অনেক কম।’
হালদা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বছর হালদা নদী থেকে প্রায় ৭ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন ডিম আহরণকারীরা। সব কিছু ঠিক থাকলে তিন দিন পর এই ডিম থেকে ১১৭ কেজি রেণু পাওয়া যাবে।’ গড়ে ৬০ কেজি ডিম থেকে ১ কেজি রেণু পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।

হালদা নদীতে মাছের ডিম সংগ্রহ
হালদা থেকে গত বছর ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে প্রতিবছর এই ডিম সংগ্রহের পরিমাণ একইরকম থাকে না। এর আগে ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।

হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা কার্পজাতীয় মাছের ডিম
এবার সংগ্রহ করা ডিম ফোটানোর জন্য হ্যাচারিগুলো সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছে তাই ডিম থেকে রেণু ফোটানোতে তেমন কোনও সমস্যাই হবে না বলে জানিয়েছেন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজহারুল আলম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাছুয়াঘোণা, শাহ মাদারি এবং মদুনাঘাটসহ ৩টি হ্যাচারির ১০৮টি কংক্রিট ও ১০টি প্লাস্টিকের কুয়ায় হালদার ডিম সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। সংস্কারের অভাবে কিছু কুয়া এতদিন নষ্ট অবস্থায় ছিল। উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে নষ্ট কুয়াগুলোও সংস্কার করা হয়েছে। তাই এবার ডিম থেকে রেণু ফোটানোতে জেলেদের কোনও সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না।