ব্যাট প্রস্তুতকারক গৌরাঙ্গ মজুমদার বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর ধরে ব্যাট তৈরি ও বিক্রির কাজ করছি। আমার কারখানায় ৭ থেকে ৮ প্রকারের ব্যাট তৈরি হয়। প্রতিদিন ন্যূনতম একশ’টি ব্যাট তৈরি সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘উইলো’ কাঠ পাওয়া গেলে আমরাও ভারত-পাকিস্তানের মতো আন্তর্জাতিকমানের ব্যাট তৈরি করতে পারবো।’
এই পাড়ার নাম যিনি বদলে দিয়েছেন তার নাম সঞ্জিত মজুমদার, যিনি এই ব্যাট তৈরির উদ্যোক্তা। সঞ্জিত ১৯৮৪ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তার দিদিবাড়িতে যান। সেখানে কাঠের তৈরি নানা শিল্পকর্ম দেখে মাথায় আসে নতুন কিছু করার। এরপর দেশে ফিরে ভাতিজা উত্তম মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে ক্রিকেট ব্যাট তৈরির পদ্ধতি শেখেন। ১৯৮৬ সালে ব্যাট তৈরি ও তা বিক্রি শুরু করেন স্থানীয় বাজারে। সেই থেকে শুরু। তার দেখাদেখি আস্তে আস্তে আরও অনেকে জড়িয়ে পড়েন এই পেশায়।
জানতে চাইলে সঞ্জিত মজুমদার বলেন, ‘যশোর শহরের ঘোপ এলাকার বাবু ভাইয়ের (লিডিং স্পোর্টস) অনুপ্রেরণায় ১৯৮৬ সালে প্রথম ব্যাট তৈরি করি। সেগুলো প্রথমে যশোরে বিক্রি হতো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে ব্যবসায় কিছুটা মন্দা যাচ্ছে। তবে ফরিদপুর অঞ্চলে ‘বইন্যে কাঠ’ নামে একটি গাছের সন্ধান পেয়েছি। খালপাড়ে স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় হয়। হালকা কিন্তু টেকসই। এই কাঠ দিয়ে আন্তর্জাতিকমানের ব্যাট তৈরির ইচ্ছে আছে আমার। সেক্ষেত্রে আরেকটি উন্নতমানের মেশিন হলেই হবে।’ তিনি জানান, শুরুতে সব কাজ হাতে করা হলেও এখন তা মেশিনে করা হয়। এতে কাজের গতি বেড়েছে। এসব কারখানায় মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার ব্যাট তৈরি হচ্ছে।
এই এলাকায় প্রায় ১৪ বছর ধরে ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কাজ করছেন ওমর আলী। তিনি জানান, প্রকারভেদে ব্যাটপ্রতি খরচ ১৫ থেকে ১৫০ টাকা। বিক্রি হয় ৩০ থেকে ২৫০ টাকা। তার অধীনে ছয়জন কাজ করেন। শ্রমিক মজুরি (ব্যাটের ধরন অনুযায়ী) প্রতি পিস ৬ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। তাদের তৈরি ব্যাট যশোরের বাজার ছাড়াও বগুড়া, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রংপুর অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান।
ব্যাট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় নিমবুত, পুয়ো, ছাতিম, কদম, নিম, জীবন, পিঠেগড়া, আমড়াসহ বিভিন্ন প্রকার দেশি কাঠ। শ্রমিকদের পাশাপাশি বাড়ির বউ-ছেলেমেয়েরাও ব্যাটে পুডিং লাগানো, ঘষামাজা, রঙ করা, স্টিকার লাগানো, প্যাকেটজাত করা ইত্যাদি টুকটাক কাজ করেন।
ব্যাট নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, একশ’ ব্যাট বানিয়ে দিলে তারা এক থেকে দেড় হাজার টাকা মজুরি পান। তাদের পক্ষে সপ্তাহে চারশ’ ব্যাট তৈরি করা সম্ভব। ব্যাটে পুডিং, স্টিকার লাগানোসহ পালিশের কাজ করেন অন্যরা।
নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সুজিত বিশ্বাস বলেন, ‘শুধুমাত্র মিস্ত্রিপাড়ায় ব্যাট তৈরির কারখানা রয়েছে ২০টিরও বেশি। তাদের একমাত্র সমস্যা হচ্ছে রাস্তাটি কাঁচা। আমরা চেষ্টা করছি খুব শিগগির যাতে এ পাড়ার ছোট ছোট রাস্তাগুলো পাকা হয়।’