বাবা দিবস উপলক্ষে দুই মেয়েই পরেছিল বাবার সাদা-কালো শার্ট। তারা বলে, ‘রাতের আঁধার কেটে দিনের আলো ফুটলেও সে আলো ফুটে ওঠে না আমাদের জীবনে। আজও বাবার স্মৃতি হাতড়ে বেড়াই সারাক্ষণ। কিন্তু বাবাকে আর খুঁজে পাই না। চোখের সামনে সেদিনের ঘটনার বিভীষিকাময় স্মৃতি কুরে কুরে খায় আমাদের।’ কথাগুলো বলার সময় তাহিয়াত অসুস্থ হয়ে পড়ে।
বাবার স্মৃতি স্মরণ করে কাঁদতে কাঁদতে নাহিয়ান আবার বলে, ‘আব্বু সুপারম্যান, আমাদের হিরো ছিল। টিফিনের টাকা থেকে সামান্য কিছু টাকা বাঁচিয়ে এইদিনে আব্বুকে সারপ্রাইজ দিতাম। আব্বুকে কার্ড, মগ ও কলম উপহার দিতাম। এছাড়া এদিন মায়ের কাছ থেকে শিখে বাবার জন্য স্যান্ডউইচ, নুডলস ও বিরানি রান্না করে একসঙ্গেই খেতাম।’
নাহিয়ান বলে, ‘পছন্দের ভিডিও গেম কিংবা প্রথম সাইকেল কিনে দেওয়ার কথা বলেছিল বাবা। স্বপ্ন পূরণের এ ধাপগুলোতে বাবার ভূমিকা ছিল বাস্তবিকই সুপারম্যানের। চাওয়ামাত্রই হাজির করার দিব্যি বলে বাবা হারিয়ে গেলে! আমাদের এমন হাজারও ছোট ছোট স্বপ্নপূরণ, ইচ্ছাগুলো বাস্তবে রূপ দিতে তিনি লড়াই করতেন সব সময়। নানা অসুবিধার মধ্যেও আমাদের চাওয়া পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। তিনি যে বাবা, সুপারম্যান, আমাদের হিরো। আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণের মানুষকে হত্যা করেছে এই পৃথিবী, এর বিচার চাই।’
পাশে বসা একরামুলের স্ত্রী আয়েশা বেগম বললেন, ‘আমার স্বামী নির্দোষ ছিল, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর বিচার আজীবন চেয়ে যাবো। সে যে নির্দোষ বিষয়টি গোটা বিশ্ব জেনে গেছে। তবে মাঝেমধ্যে মনকে বোঝাই কিছুটা বিচার পেয়েছি। কী আর বলি, এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে হত্যার বিচার হয় না।’
প্রসঙ্গত, নিহত কাউন্সিলর টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালি পাড়ার আবদুস সাত্তারের ছেলে। তিনি ওই পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর এবং স্থানীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। গত বছর ২৬ মে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একরাম নিহত হওয়ার পর র্যাব দাবি করে, তিনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। এ ঘটনার পর থেকেই তার স্বজনরা দাবি করে আসছেন, নির্দোষ একরামকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।