বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউন প্রতিবেদকের। তারা বলেছেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে আমাদের দেশ রাখাইনে ফিরে যেতে চাই। এজন্য আমাদেরকে সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নিয়ে শিগগিরই আমাদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে বাংলাদেশ সরকার।।’
১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামেনি এখনও। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে এদেশে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে তাদের ব্যাপক আগমন ঘটে। রাখাইনে সহিংস ঘটনায় প্রাণভয়ে পালিয়ে আসে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে নতুন-পুরনো মিলিয়ে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭ জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারে অবস্থান করছে। উখিয়া ও টেকনাফে ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছে সরকার।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘যতই সাহায্য সহযোগিতা পাই না কেন, ভিন দেশে কি কারও ভালো লাগে? এই রোহিঙ্গা বস্তিতে কোনও রকম থাকলেও মনটা রাখাইনে চলে গেছে। কবে আমরা আমাদের দেশে ফিরতে পারবো সে আশায় আছি। জানি না আল্লাহ আমাদের ওপর কতটুক সহায় হন। আমরা এখনও স্বপ্ন দেখি রাখাইনে ফিরে যেতে।’
এ প্রসঙ্গে কুতুপালং বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের এলাকার জন্য সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। আদৌ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হবে কিনা সে বিষয়ে এখানকার স্থানীয়রা সন্দিহান। স্থানীয় জনগণ হিসেবে আমাদের দাবি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে প্রত্যাবাসন করা হোক।’
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াতেই আটকে আছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন। দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার বিষয়টি ঝুলে আছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে একাধিক বৈঠকের পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। আমি মনে করি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো দরকার। বাংলাদেশ সরকারের উচিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। তা না হলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান কোনও দিন হবে না।’
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের সব সংস্থা কেন্দ্রীয় ও ক্যাম্প পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালন করবে। তবে আইওএম যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে এবং তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাবে।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গাদের বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের যে ঐতিহাসিক ভিত্তি, ঐতিহাসিক সম্পর্ক সেসব বিষয়গুলো নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’
কক্সবাজার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। কারণ, আমাদের দেশে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এটি আমাদের দেশের জন্য একটি বিশাল বোঝা। আমরা বিভিন্ন কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছি না। আমরা চাই, বিশ্ববাপী শরণার্থী সমস্যার সমাধান হোক।’
তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি মিয়ানমারের ওপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেন।