দুদকের মামলায় জেল হাজতে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী

বগুড়ায় জেল হাজতে যাওয়ার পথে লতিফ সিদ্দিকীবগুড়ার আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জামিন নিতে এসে জেল হাজতে গেছেন সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে তিনি বগুড়ার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দুদকের পিপি আবুল কালাম আজাদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলা সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার রানীরনগর বাজারে বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের পাট ক্রয় কেন্দ্র ছিল। ব্রিটিশ সরকারের সময় দুই একর ৩৮ শতকের জমিটি সুরুজমল আগরওয়ালা নামে এক ব্যক্তির কাছে হুকুম দখল করা ছিল। বগুড়া শহরের কালিতলা এলাকার মৃত হারুন-অর-রশিদের স্ত্রী জাহানারা রশিদ ২০১০ সালের ১৩ মে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় থেকে জমিটি তিন বছরের জন্য লিজ নেন। প্রতি বছর লিজ মানি ধার্য ছিল এক লাখ ২০ হাজার টাকা। জাহানারা রশিদ এক বছর লিজ মানি পরিশোধ না করেই ওই জমি কেনার জন্য ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। সরকারি জমি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দিতে বা বিক্রি করতে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের নিয়ম থাকলেও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী তা করেননি। তিনি তার পরিচিত জাহানারা রশিদের কাছে দরপত্র ছাড়াই বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। লতিফ সিদিকী তার একক সিদ্ধান্তে ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৫ টাকা ১১ পয়সা মূল্যের জমিটি মাত্র ২৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৭৪ টাকা ১১ পয়সায় বিক্রি করেন। এতে সরকারের ৪০ লাখ ৬৯ হাজার ২১ টাকা ১১ পয়সা আর্থিক ক্ষতি হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

এদিকে মূল্যবান ওই জমিটি কম দামে বিক্রি করায় সংক্ষুদ্ধ হয়ে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইসমাইল হোসেন হাইকোর্টে রিট করেন। পরে জাহানারা রশিদ সুপ্রিম কোর্টে রিট করলে তার আবেদন খারিজ হয়ে যায়। দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম ২০১৪ সাল থেকে তদন্ত শুরু করেন। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে আদমদীঘি থানায় এ মামলা করেছিলেন। অপরাধের সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হওয়ায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আসামি টাঙ্গাইলের কালীহাতি উপজেলার ছাতিহাতি গ্রামের মৃত আবদুল আলী সিদ্দিকীর ছেলে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং বগুড়া শহরের কালিতলা এলাকার মৃত হারুণ-অর-রশিদের স্ত্রী জাহানারা রশিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি চার্জশিট (নং-৩৭, আদমদীঘি থানা) দাখিল করেন।

দুদকের পিপি আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালত ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন। বৃহস্পতিবার সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী স্বেচ্ছায় স্পেশাল জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চান। আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তাকে হাজতে পাঠানো হয়েছে। দুদক পক্ষে আমি এবং আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট আল মাহমুদ, অ্যাডভোকেট হেলালুর রহমান জামিন শুনানিতে অংশ নেন।’