সরেজমিনে রেল ব্রিজের ওপর গিয়ে দেখা গেছে, রেল লাইনের দুই পাশে কোনও রেলিং নেই, রেল লাইনের কাঠের স্লিপারগুলো অনেক পুরনো, কিছু দূর পরপর অনেক কাঠের স্লিপার ভাঙা। এসব স্লিপারের সঙ্গে লাগানো হুক বোল্ট ও ডগ স্পাইক চুরি হয়ে গেছে। ফলে স্লিপার রেল লাইনের সঙ্গে লাগানো অবস্থায় নেই।
এই ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াতকারী চট্রগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী শফিকুল ইসলাম জানান, ‘ট্রেন এই ব্রিজের ওপর আসলেই আতঙ্কে থাকি। রেল লাইনের ওপর কাঠের স্লিপার ভাঙাচোড়া থাকায় ব্রিজে ওঠার পর ট্রেন হেলেদুলে চলে। রেল লাইনের দুই পাশে রেলিং না থাকায় মনে হয় ট্রেন যে কোনও সময় নিচে পড়ে যাবে। যাত্রীরা খুব ভয়ের মধ্যে ওই সময়টা পার করে।’
নেত্রকোনা মোহনগঞ্জ হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী আনন্দ মোহন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী কামরুন্নাহার জানান, রেল ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্রেনে করে প্রায়ই যাতায়াত করতে হয়। ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় খুব আতঙ্কের মধ্যেই থাকেন তিনিসহ অন্য যাত্রীরা।
রেল ব্রিজের পাশে বসবাসকারী কেওয়াখালী এলাকার কামাল মিয়া জানান, ‘রেল ব্রিজের নিরাপত্তায় কোনও কর্মচারী না থাকায় রাতের বেলায় চোরেরা বল্টু খুলে নিয়ে যায়। এছাড়া দীর্ঘ দিনের পুরনো কাঠের স্লিপারগুলো পচে নষ্ট হয়ে ভেঙেচুড়ে গেছে। ট্রেন যখন রেল ব্রিজের ওপর দিয়ে চলে তখন ট্রেন হেলেদুলে চলে, মনে হয় ট্রেন যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’
রেলওয়ে কর্মচারী তাজ উদ্দিন জানান, কোনও নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় রাতে-দিনে অবাধে রেল লাইন থেকে হুক বোল্ট ও ডগ স্পাইক চুরি হয়ে যাচ্ছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এসব বার বার নতুন করে লাগিয়েও কোনও সমাধান করতে পারছে না।
ঝঁকিপূর্ণ রেল ব্রিজের কারণে যেকোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে দাবি করে জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম বলেন, ‘রেল ব্রিজটি সংস্কার ও মেরামতের জন্য একাধিকবার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। এরপরও কোনও কাজ না হওয়ায় আমরা হতাশ।’
রেল ব্রিজটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ নয়’ দাবি করে ময়মনসিংহ রেলের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সুকুমার বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্রিজের রেল লাইনের ওপর ৬৯টি কাঠের স্লিপার ভেঙে গেছে। নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় রাতের আধারে শতাধিক হুক বোল্ট ও ডগ স্পাইক চুরি হয়ে গেছে। তবে রেল ব্রিজ সংস্কার ও মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুতই রেল ব্রিজের সংস্কার ও মেরামত কাজ করা হবে।’
আরও পড়ুন- সেতু নয়, অন্য চার কারণ চিহ্নিত করেছে রেলওয়ের তদন্ত কমিটি