দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের বলদিয়াপাড়া গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। বর্তমান সময়ে উত্তরাঞ্চলের অনেক নদীই মরা হিসেবে প্রতীয়মান হলেও খরস্রোতা রূপ ধারণ করে চলেছে আত্রাই। খানসামা ও বীরগঞ্জ উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীর বেশিরভাগ অংশ শুকিয়ে গেছে। তবে যে স্থান দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে তার উপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৮০ মিটার দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো। যে সাঁকো দিয়ে চলাচল করে জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার একাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার একাংশ ও নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার একাংশের মানুষ। কারণ এই সাঁকো ব্যবহার না করলে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌছাঁতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হবে। অবশ্য ভরা বর্ষায় এইসব মানুষকে নৌকায় পারাপার হতে হয়। রাতের আঁধারে কিংবা যানবাহন পারাপারে সমস্যা হলে বাধ্য হয়ে ওই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। বাঁশের সাঁকো হলেও টাকা দিয়েই পারাপার হতে হয় যাত্রীদের। কারণ ওই টাকা দিয়েই আবার মেরামত হয় সাঁকোটি।
ঝাড়বাড়ী-জয়গঞ্জ ঘাটের ইজারাদার নুর আলম হোসেন, সাঁকোটি নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা ও অর্থদাতা তিনি। তিনি জানান, এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার কৃষক, কর্মজীবী নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রী পারাপার হয়। ঝুঁকি নিয়েই সাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যান, অটোবাইকের মত যানবাহন চলাচল করে এই সাঁকো দিয়ে। ভরা বর্ষায় নদীর পানি বেড়ে গেলে মানুষজনকে পারাপার হতে হয় নৌকায়। রাতের আঁধারে কিংবা ডিঙ্গি নৌকায় জায়গা না হলে তাদের ঘুরতে হয় দীর্ঘ পথ।
এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের জন্য মানববন্ধন কর্মসূচি, মন্ত্রী-এমপি কিংবা জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দেওয়া বা প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ঝাড়বাড়ী-জয়গঞ্জ খেয়াঘাট সেতু বাস্তবায়ন কমিটি। এ কমিটির আহ্বায়ক শেখ জাকির হোসেন জানান, দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ী চৌরাস্তা মোড় থেকে আত্রাই নদী পার হয়ে পূর্ব দক্ষিণে নীলফামারী ১৭ কিলোমিটার আর আত্রাই নদীর পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও জেলা সদর ২২ কিলোমিটার। আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ মনে করি, এখানে একটি সেতু হলে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হবে। এতে সহজ হয়ে উঠবে শিক্ষা, চিকিৎসা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়ন। যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে, কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হবে। অথচ একটি সেতু নির্মাণের অভাবে এলাকার লোকজন পিছিয়ে পড়ছে। কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার কারণে।
খানসামা উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাপস কুমার বাগচী বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ওখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। এখন কাগজপত্র চালাচালি হচ্ছে। শিগগিরই এখানে সার্ভে হবে এবং অবস্থান নির্ণয়ের পর সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হবে। যেহেতু এখানে যে সেতুটি হবে সেটি অনেক বড়, কমপক্ষে ৫০০ মিটার। তাই প্রক্রিয়া হতেও একটু সময় লাগবে।’ তবে যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।