পপির রুম থেকে বোরকা উদ্ধার করে পিবিআই, আদালতে পপির চাচি


নুসরাত হত্যা মামলাফেনী সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ চার জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) ১৯তম দিনের মতো ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে সাক্ষ্য দেন তারা। এখন পর্যন্ত এই মামলার ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হলো।
জেরা শেষে সাক্ষীদের ভাষ্যের ব্যাপারে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহাম্মদ।

জেরার সময় মামলার অন্যতম আসামি উম্মে সুলতানা পপির চাচি মোসাম্মৎ রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘গত ১৯ এপ্রিল পিবিআই কর্মকর্তারা দুপুরে আমাদের বাড়ি আসেন। সঙ্গে আমার ভাসুরের মেয়ে পপিও ছিল। তারা পপিসহ তাদের ঘরে যান এবং পপির নিজ কক্ষের আলনা থেকে একটি নেভি-ব্লু রঙের বোরকা ও একটি পেস্ট রঙের ওড়না উদ্ধার করেন। এসময় কর্মকর্তারা জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে দিলে আমি তাতে স্বাক্ষর দিই।’

আরেক সাক্ষী স্থানীয় ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনও আদালতকে জানান, তারাও বোরকা-ওড়না উদ্ধারকালে সামনে ছিলেন এবং জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করেছেন। অপর সাক্ষী স্থানীয় ব্যবসায়ী ফজলুল করিমও একই কথা বলেছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, সকাল সাড়ে ১১টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে মামলার ১৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী চার সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করেন। বুধবার এই মামলার ৪২ নম্বর সাক্ষী সোনাগাজি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মহি উদ্দিন চৌধুরী, ৪৩ নম্বর সাক্ষী হাফেজ মোবারক হোসেন, ৪৪ নম্বর সাক্ষী মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ৪৫ নম্বর সাক্ষী রেজা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।

এর আগে, ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী ও নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।

২৯ মে আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়। ১০ জুন মামলাটি আদালত আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত।

উল্লেখ্য, নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে তিনি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় তাকে কৌশলে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এই ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।