দেশের প্রথম স্মার্ট ল্যাব অটোমেশন সার্ভিস চালু করলো শাবি

স্মার্ট ল্যাব অটোমেশন সার্ভিসদেশে প্রথমবারের মতো সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনলাইনভিত্তিক অত্যাধুনিক ল্যাব ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্মার্ট ল্যাব অটোমেশন সার্ভিস চালু করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিইই) বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইই বিভাগের অধীনে সেন্টার ফর রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেন্সি (সিআরটিসি) এই ল্যাব ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে। এর মাধ্যমে এখন থেকে নির্মাণসামগ্রী পরীক্ষার ফল অনলাইনেই পাবেন গ্রাহকরা।

স্মার্ট ল্যাব অটোমেশন সার্ভিসস্মার্ট ল্যাব অটোমেশন সার্ভিস নিয়ে আলাপকালে সিইই-সিআরটিসির সমন্বয়ক ড. মো. ইমরান কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্মাণ প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী, যেমন—সয়েল, ওয়াটার, ইট, সিমেন্ট, বালু, পাথর, রড ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এই পরীক্ষায়ও অনেক সময় ভুল রিপোর্ট দেওয়া হয়। অনেকে আবার এ রিপোর্টের ফলাফল ইচ্ছামতো পরিবর্তন করে জমা দেন। ফলে পরবর্তীতে নির্মাণ প্রকল্পে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত ও সহজে কাজ করার জন্য স্মার্ট ল্যাব অটোমেশন সার্ভিস চালু করেছি। এখানে সিভিল ও এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সিআরটিসির মাধ্যমে বিভিন্ন টেস্টের রিপোর্ট অনলাইনে দেওয়া হবে।’ ফলে কোনও রিপোর্ট দ্রুত পেতে সুবিধা হবে বলে জানান তিনি।

স্মার্ট ল্যাব অটোমেশন সার্ভিস

ড. কবির আরও বলেন, ‘নির্মাণ প্রকল্পে কিছু মানুষ অসাধু উদ্দেশ্য নিয়ে এ ধরনের পরীক্ষায় নকল রিপোর্ট তৈরি করে। ওই রিপোর্ট যাচাই-বাছাইয়েরও সুযোগ থাকে না। ফলে নকল রিপোর্ট মেনেই নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়। অনেক সময় এ রিপোর্টের কারণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আমাদের সিআরটিসির মূল উদ্দেশ্য হলো—এ ধরনের নকল রিপোর্ট তৈরি ও রিপোর্টে পরিবর্তন রোধ করা। এজন্য আমরা যেকোনও পরীক্ষার ফল অনলাইনে প্রকাশের সুবিধা রেখেছি।’

প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এই স্মার্ট ল্যাব অটোমেশন সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। এ সময় অনলাইনভিত্তিক এ সার্ভিস চালু করায় উপাচার্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

স্মার্ট ল্যাব অটোমেশন সার্ভিসঅনলাইনে রিপোর্ট তৈরি ও জমা সম্পর্কে টেকনেক্সট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও এ প্রকল্পের এক্সপার্ট ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ রেজওয়ানুল হক রুবেল বলেন, ‘দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি দেখেছি, আগে থেকেই সিআরটিসির কার্যক্রম আছে। কিন্তু শাবিতে যে সিআরটিসি কাজ করে, তা আধুনিকায়ন করা হয়েছে। সবকিছু অনলাইনভিত্তিক সাজানো হয়েছে। যেকোনও কাজ অনলাইনে আদান-প্রদান করা হয়। এছাড়া, অনলাইন সার্ভিস দেওয়ার ক্ষেত্রে রিপোর্টে একটি ইউনিক কোডের ব্যবস্থা রয়েছে, যার মাধ্যমে গ্রাহকরা সেই রিপোর্ট নিজেই যাচাই করতে পারবেন।’

ইঞ্জিনিয়ার রুবেল আরও বলেন, ‘এছাড়া রিপোর্টে একটি কিউআরকোড দেওয়া থাকবে, যা কোনও স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে স্ক্যান করে গ্রাহকরা সরাসরি তাদের রিপোর্ট যাচাই করতে পারবেন।’ এর ফলে নকল রিপোর্ট বন্ধ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

সিইই সিআরটিসির চেয়্যারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, ‘নির্মাণ প্রকল্পে সিআরটিসি মূলত চারটি বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে প্রকল্পের কাঠামো, রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন, এনভায়রনমেন্ট ও ওয়াটার রিসোর্স নিয়ে কাজ করে। এজন্য প্রকল্পের অধীনে অনেক অত্যাধুনিক ল্যাব আছে, যেখানে কোনও প্রকল্পের সয়েল টেস্ট, ওয়াটার কোয়ালিটি টেস্ট ও এয়ার টেস্ট, সয়েলের বিয়ারিং ক্যাপাবিলিটি, লোড ক্যাপাবিলিটি, নির্মাণসামগ্রী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এছাড়া প্রকল্পের কাঠামো নির্মাণে পরামর্শ, প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা ও তার পরিবেশগত প্রভাব, প্রজেক্ট মনিটরিং ইত্যাদি কাজ করাও হয়।
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিআরটিসি সেবা চালু রয়েছে। তবে দেশে সবার আগে সিআরটিসি সেবার অধীনে স্মার্ট ল্যাব অটোমেশন সেবা শাবিতে চালু হলো।