যে গ্রামে দুর্গাপূজার সব আয়োজনে নারীরা

নারীদের আয়োজনে শারদীয় দুর্গাপূজাসৈয়দপুরে বাঙালিপুর ইউনিয়নের বৈষ্য মালিপাড়ার পুরুষরা পেশাগতভাবে ঢাকের (ঢুলি) বাজনা বাজান। পাশাপাশি বাঁশ ও বেতের কাজ করে থাকেন। তাই এই গ্রামের নারীরা তাদের পাড়ার মন্দিরে প্রতিমা তৈরি, পূজামণ্ডপে উলুধ্বনি, ঢাক, কাসরসহ পূজা অর্চনার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুরোহিতসহ সব কাজই করছেন নারীরা। এছাড়া এ কাজে রয়েছেন পাঁচ জন নারী আনসার সদস্য।
সরেজমিন দেখা যায়, ওই গ্রামের সব পুরুষ শারদীয় দুর্গাপূজায় উপজেলার বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় চুক্তিভিত্তিক ঢোল বাজাতে অবস্থান করছেন। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে নারীরা গ্রামটিতে পূজার সব আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন।
তারা নিজেরাই নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করেছেন প্রতিমা। পুরোহিত (ঠাকুর) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারী। রঙ-তুলির আঁচড় অনুষঙ্গসহ সাজসজ্জায় গড়ে তোলা হয়েছে মা দুর্গার প্রতিমা। মহাঅষ্টমীর পূজা, কুমারী পূজা ছিল দেখার মতো। কেউ বাজাচ্ছেন ঢাক আবার কেউ কাসর ঘণ্টা, সেই সঙ্গে আরতিও। নারীদের আয়োজনে পূজামণ্ডপে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থী নারী-পুরুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।
বৈষ্য মালিপাড়া গ্রামের পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীপালি রানী বলেন, ‘আমাদের পাড়ায় ৩৫ থেকে ৪০ পরিবার বসবাস করে, যাদের সবাই বাঁশের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেই সঙ্গে পূজা উপলক্ষে ঢোল বাজাতে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে অবস্থান করেন। তাই পাড়ার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবছর আমরা নারীরা দুর্গাপূজা উদযাপন করে থাকি।’
দুর্গা পূজামণ্ডপের সাধারণ সম্পাদক গীতা রানী রায় বলেন, ‘আমাদের স্বামীরা বাঁশ বেতের ডালি, কুলাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরি করার পাশাপাশি বারো মাসই ঢোল বাজানোর কাজ করেন। পূজার ঢাক বাজানোসহ বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে তারা সারা বছর ঢোল বাজানোর আমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন। ফলে এই গ্রামে পূজার সব আয়োজন করতে হয় নারীদেরই।’
শুধু তা-ই নয়, ওই পূজামণ্ডপে আনসার ভিডিপির কয়েকজন সদস্যকে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে, যাদের সবাই নারী। স্বেচ্ছাসেবকের কাজও নারীরা করছেন। পুরোহিতও (ঠাকুর) নারী।
বাঙালিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রণবেস বাগচী দুলাল বলেন, ওই পাড়ার ৪০টি পরিবারের লোকজন পেশাগত ঢোল বাজানোর কাজে এলাকার বাইরে অবস্থান করেন। পুরুষরা গ্রামে না থাকায় প্রতিবছর নারীরা পূজার আয়োজন করে থাকেন। তিনি বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে তাদের।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) পরিমল কুমার সরকার বলেন, উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করছেন তাদের ওই উৎসব আয়োজনে। তিনি বলেন, নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর জন্য তাদের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এবার উপজেলায় ৮১টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। এরমধ্যে বাঙালিপুর ইউনিয়নে নারীদের আয়োজনে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বৈষ্যপাড়ার মণ্ডপটিতে।