আবরার হত্যা: গ্রেফতার ফুয়াদের পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার

মুহতাসিম ফুয়াদ (সবুজ পোশাক)বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন মুহতাসিম ফুয়াদ। এই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে তাকে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে ছেলের সম্পৃক্ততার অভিযোগে মুষড়ে পড়েছেন ফুয়াদের পরিবারের সদস্যরা। চুরমার হয়ে গেছে তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন। একটি মেধাবী ছেলের এরকম বীভৎস হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ফুয়াদের গ্রামের বাড়ি ফেনীর নাঙ্গলমোড়ার মানুষ।

মুহতাসিম ফুয়াদ বুয়েটের ১৪তম ব্যাচের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। বুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদে ছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে তাকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার গ্রামে বাড়ি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের নাঙ্গলমোড়া গ্রামে।

বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকালে মুহতাসিম ফুয়াদের গ্রামের বাড়িতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় স্থানীয় ইউপি সদস্য সরোয়ার মাহমুদ শামীমের। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘মুহতাসিম ফুয়াদের বাবা আবু তাহের সেনাবাহিনীতে মেডিক্যাল কোরে চাকরি করতেন। অবসরে যাওয়ার পরও দুই সন্তানের পড়াশোনার ব্যয় বহন করতে তিনি এখন সেনা কল্যাণ সংস্থার ঢাকা অফিসে চাকরি করছেন। পরিবার নিয়ে ঢাকায়ই থাকেন। বাবার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রাম সেনানিবাস স্কুল ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ নিয়ে পাস করে মুহতাসিম ফুয়াদ। আবরার হত্যায় ফুয়াদ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই মুষড়ে পড়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।’  

ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এফএম আজিজুল হক মানিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ভাবতেও পারি না এমন মেধাবী একটা ছেলে আরেকজন মেধাবীকে পিটিয়ে হত্যার মতো লোমহর্ষক ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা এলাকাবাসী এটি কোনোভাবে মানতেই পারছি না। আমার এলাকার লোকজন তাকে ভালো ছেলে হিসেবেই জানে। তার বাবা আবু তাহের হোসেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য। ফুয়াদরা দুই ভাই বোন। সে বড়। সহজ-সরল প্রকৃতির আবু তাহের তার ছেলে ফুয়াদকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন ভেস্তে গেছে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফুয়াদের বাবা আবু তাহের মোবাইল ফোনে বলেন, ‘তাকে নিয়ে আমার অনেক আশা-ভরসা ছিল। সব ধুলোয় মিশে গেছে।’

হতাশায় ভেঙে পড়া এই বাবা আরও বলেন, ‘ছেলের তো কোনও অভাব ছিল না। আমি তাকে কোনও অভাব বুঝতে দেইনি। কিন্তু কেন সে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লো? আবার কেনইবা আরেকজনকে হত্যার অভিযোগ আসবে তার বিরুদ্ধে? ঘটনার পর সে আমাকে ফোন দিয়েছিল। ফোনে সে আমাকে বলেছিল দুটি টিউশন শেষে ক্যাম্পাসে ফিরলে পুলিশ তাকে সহায়তার জন্য হল থেকে ডেকে নেয়। তাই ঘটনাটি আমি সঠিকভাবে তদন্তের দাবি করছি।’

উল্লেখ্য, রবিবার (৬ অক্টোবর) রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে। রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে আবরারের মরদেহ উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আবরার ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে। তার বাবা বরকত উল্লাহ একজন এনজিওকর্মী, মা রোকেয়া বেগম কিন্ডার গার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার বড়। তার ছোট ভাই ঢাকা কলেজের ছাত্র।

আরও পড়ুন...

আবরার হত্যা: মাদক দিয়ে ‘গণপিটুনির নাটক’ সাজাতে চেয়েছিল ছাত্রলীগ 

‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের না চিনলে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চলতো’

বুয়েটে আবরার হত্যা: ছাত্রলীগ থেকে ১১ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার

২০০৫ ও ২০১১ নম্বর রুম ছিল ছাত্রলীগের টর্চার সেল

আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ

ফোনে ডেকে নেওয়ার পর লাশ মিললো বুয়েট শিক্ষার্থীর

আবরার হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা