বড়পুকুরিয়ার সাবেক সাত এমডিসহ ২৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ

কয়লা দুর্নীতিদিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে এক লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা (যার আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা) আত্মসাতের অভিযোগে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক সাত ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। একইসঙ্গে বিচারক তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিরও আদেশ দিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে দিনাজপুরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আজিজ আহমদ ভুঞা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ বিষয়ে শুনানি শেষে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিনাজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের মামলা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. এম আমিনুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ বিষয়ে শুনানি ছিল আজ। শুনানি শেষে বিচারক অভিযোগপত্রের তালিকাভুক্ত বড়পুকুরিয়ার সাবেক সাত এমডিসহ ২৩ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এছাড়াও তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন মোতাবেক ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকায় পাঁচ কর্মকর্তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আদেশ দিয়েছেন।বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি (ছবি: প্রতিনিধি)

অভিযোগপত্রের তালিকায় রয়েছেন- বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্পের সাবেক এমডি মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আব্দুল আজিজ খান, প্রকৌশলী খুরশিদ আলম, প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, মো. আনিসুজ্জামান, প্রকৌশলী এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও প্রকৌশলী হাবিব উদ্দীন আহমেদ। এছাড়া সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শরিফুল আলম, আবুল কাশেম প্রধানিয়া, আবু তাহের মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী, ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান হাওলাদার, আরিফুর রহমান ও সৈয়দ ইমাম হাসান, উপ-ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান, মোর্শেদুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, জাহিদুর রহমান, সহকারী ব্যবস্থাপক সত্যেন্দ্র নাথ বর্মন, মনিরুজ্জামান, কোল হ্যান্ডেলিং ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপক সোহেবুর রহমান, উপ-মহাব্যবস্থাপক একেএম খাদেমুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক অশোক কুমার হাওলাদার ও উপ-মহাব্যবস্থাপক জোবায়ের আলী।

মামলার এজাহারে ১৯ জন আসামি ছিলেন। তদন্তে ৯ জনের নাম যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এজাহারনামীয় পাঁচ জনকে আসামি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। চার্জশিটে যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন সরকার, ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক একরামুল হক, সাবেক ব্যবস্থাপক আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী ও মহাব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র সাহা।

মামলা সূত্রে জানা গেছে,  ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন কয়লা চুরি হয় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে। যার আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা ৮৪ পয়সা। এই ঘটনায়দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা গায়েবের ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান বাদী হয়ে গত বছর ২৪ জুলাই ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে পার্বতীপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি দুদকের তফশিলভুক্ত হওয়ায় দুদক কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। পরে মামলাটি দুদকের উপ-পরিচালক সামসুল আলম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত করেন। গত ২৪ জুলাই মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়। আসামিরা দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়।