‘তিনশ টাকা না দিলে পরীক্ষায় পাস নয়’

জেএসসি পরীক্ষার ব্যবহারিক অংশের জন্য অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পৃথক অভিযোগপত্র দিয়েছেন একজন অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. হযরত আলী।

শিক্ষার্থীর উদ্ধৃতি দিয়ে অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘হাবিবুর স্যার বলেছেন- সবাইকে তিনশ টাকা দিতে হবে, তা না হলে পরীক্ষায় পাস করে দেওয়া হবে না।’  

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে- জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে তথ্য প্রযুক্তি ও ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১০ নভেম্বর শিক্ষার্থীপ্রতি অতিরিক্ত ৩০০ টাকা করে আদায় করেছেন কেন্দ্র সচিব ও দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার। তাকে সহযোগিতা করেছেন সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান, আমিনুল ইসলাম ও কর্মচারি মো. আব্দুল হাকিম; কিন্তু এটি অবৈধ এবং বোর্ডের নির্দেশনার পরিপন্থী। এ বিষয়ে তদন্ত করে আদায় করা টাকা ফেরতসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার দাবি জানান ওই অভিভাবক।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, অতিরিক্ত টাকা আদায় নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বললে তিনি টাকা ফেরতের আশ্বাস দিলেও কোনও শিক্ষার্থীকে তা ফেরত দেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে তিনশ টাকা করে আদায়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

একাধিক অভিভাবক বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়ের এসে বলেছে, ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য স্যার ৩০০ টাকা দিতে বলেছেন। ছেলে-মেয়েদের কথা মতো আমরা দিয়েছি, তা না হলে শিক্ষকরা পরীক্ষায় নাম্বার কম দেবেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক জানান, ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে প্রায় দুই শতাধিক জেএসসি পরীক্ষার্থীর কাছে ৩০০ টাকা করে আদায় করা হলেও প্রকৃতপক্ষে কোনও পরীক্ষা নেওয়া হবে না, শুধু নাম্বার পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এটা রীতিমতো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা।

এর আগে এই জেএসসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণের সময়ও অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়েছে বলে জানান এই শিক্ষক।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার বলেন, ‘বিষয়টি ঠিক নয়। প্রতিটা প্রতিষ্ঠান যেমন নেয়, তেমনি ২০-৫০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এর বেশি নয়।’

অতিরিক্তি টাকা নেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট কোনও জবাব না দিয়ে বলেন, ‘না, এটা নিতে পারে না।’

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাদের বলেন, ‘এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’