দিনাজপুর
নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে আজ শুক্রবার সকাল থেকে দিনাজপুরে বেশিরভাগ যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চালকরা। তবে এটি কোনও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয় বলে জানিয়েছেন পরিবহন নেতারা।
চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে শুধু চালকদেরই দোষারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু চালকরা তো ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা ঘটায় না। দুর্ঘটনা কমাতে হলে চালকদের পাশাপাশি যাত্রীসহ সবাইকে সচেতন করতে হবে। এই পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। আমরা পেটের ভাত জোগাড় করতে এসেছি। কোনও অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার জন্য জেলে যেতে রাজি নই। তাই এই আইনটি দ্রুত সংশোধন প্রয়োজন। আর এই সংশোধনের দাবিতেই আমরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি।’
দিনাজপুর মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি বলেন, ‘এটি সংগঠনের সিদ্ধান্ত না। কিছু চালক নিজেরাই বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এটি নিয়ে বৈঠক করা হচ্ছে।’
এদিকে কোনও ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। সফিকুল ইসলাম নামের একজন জানান, ‘সকালে পঞ্চগড় যাওয়ার উদ্দেশে টার্মিনালে এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। এতে বিপাকে পড়েছি আমি। এখন বিকল্প যানবাহনে করে যেতে হলে আমাকে ভোগান্তি পোহাতে হবে। বাড়তি ভাড়াও যাবে।’
একই কথা জানান ফুলবাড়ীর উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হওয়া রুস্তম আলী। তিনি বলেন, ‘এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাবো জরুরি প্রয়োজনে। কিন্তু বাস বন্ধ। এখন অটোতে করে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হবে তিন গুণ। সময়ও লাগবে দ্বিগুণ। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে বাস শ্রমিকরা যাত্রীদের হয়রানি করছে।’
এদিকে দিনাজপুরের হিলি থেকে হিলি-দিনাজপুর, হিলি-বগুড়া পথে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন চালকরা। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে চালকরা গাড়ি বন্ধ রেখে এই কর্মসূচি পালন শুরু করেন। আজ শুক্রবারও বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে ভারত থেকে দেশে ফেরা যাত্রীরা বেশি বিড়ম্বনায় পড়ছেন। তারা বিকল্প উপায়ে বাড়তি ভাড়ার মাধ্যমে সিএনজি, অটোরিকশা, ইজিবাইকে করে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। তবে হিলি-ঢাকা, হিলি-জয়পুরহাট রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
নওগাঁ
টানা পাঁচ দিন ধর্মঘটের পর নওগাঁ থেকে ঢাকা রুটে বাস চলাচল শুরু হলেও অভ্যন্তরীণ রুটে বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি এখনও বন্ধ রয়েছে ট্রাক-ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান চলাচল।
নওগাঁ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘দেশের অনেক জেলায় বাস চলাচল শুরু হয়েছে। কিন্তু নওগাঁয় এখনও শুরু হয়নি। এখন শ্রমিকরা যদি বাস না চালায়, তাহলে আমরা তো তাদের জোর করতে পারি না।’
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে তৃতীয় দিনের মতো পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকালে টাঙ্গাইল থেকে কোনও দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের।
জানা যায়, নতুন সড়ক আইনের কিছু ধারা সংস্কারের দাবিতে গত বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে টাঙ্গাইলে পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে বাসচালক ও শ্রমিকরা।
টাঙ্গাইল বাস-মিনিবাস শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চিত্ত রঞ্জন সরকার বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় শ্রমিক ফেডারেশনের বৈঠক হয়েছে। আজও সকাল ৯টা থেকে বৈঠক চলছে। বাস চলাচলের বিষয়ে বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত হবে।’
টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বাস চলাচল আজও বন্ধ রয়েছে। তবে বিকালের দিকে বাস চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে।’
বেনাপোল
পঞ্চম দিনের মতো পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে যশোরের বেনাপোলে। ফলে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দরে। বন্দরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব আদায়েও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কাজ বন্ধ থাকায় বেকায়দায় পড়েছেন বন্দরের শ্রমিকেরা। গন্তব্যে যেতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন ভারতফেরত যাত্রীরা। যানবাহন বন্ধ থাকায় ট্রেনে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে।
ভারত ফেরত কয়েকজন যাত্রী জানান, অযৌক্তিক দাবি আদায়ের নামে শ্রমিকরা যাত্রীদের জিম্মি করছে। তারা কীভাবে গন্তব্যে পৌঁছাবেন, কোথায় থাকবেন, এসব দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না তাদের।
অন্যদিকে ট্রাক শ্রমিকরা জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইন তাদের পক্ষে মানা সম্ভব না। আইনের ধারা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
বেনাপোলের সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাসচালকরা গাড়ি রেখে চলে গেছেন। আর গাড়ি ছাড়তে না পারায় যাত্রীরা কাউন্টার ও বিভিন্ন হোটেলে অপেক্ষা করছেন।’
বেনাপোল বন্দরের ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য বন্দরে আটকা পড়েছে। ফলে আমরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, ‘দেশের স্থলপথে আমদানি হওয়া পণ্যের ৭০-৮০ শতাংশ আসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এসব পণ্যের মধ্যে শিল্পকারখানার প্রয়োজনীয় কাঁচামালসহ ওষুধ শিল্পের কাঁচামালও রয়েছে। লাগাতার ধর্মঘটে পণ্য পরিবহন করতে না পারায় লোকসান হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-কারখানার উৎপাদনও।’
রাজস্ব আহরণকারী সোনালী ব্যাংকের বেনাপোল শাখার ম্যানেজার রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিক ধর্মঘট যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেবে। এই কয়দিনে বেনাপোল কাস্টমস প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সড়ক নিরাপত্তা আইন-২০১৮ পরিবর্তনের দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর সকাল থেকে শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়। এর ফলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্য পরিবহন ও বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।