জৈব বালাইনাশক পদ্ধতিতে নিরাপদ ফসল উৎপাদন

শাক-সবজিতে জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহার নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে গত পাঁচ বছর ধরে জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহার করছেন গাজীপুরের কয়েকজন কৃষক। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে তারা এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেন। গাজীপুর মহানগরের ভাদুন এলাকার কৃষক জ্ঞানেন্দ্রনাথ সরকার জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহারের একজন কৃষক। তিনি বলেন,‘লাউ, ফুলকপি, কুমড়া, করলা, পেঁপে, পেয়ারা প্রভৃতি মৌসুমি ফসলে তিনি জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেন। এ পদ্ধতি প্রয়োগে ১৭৫ শতক জমি থেকে খরচ বাদে বছরে তার কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়।’

জ্ঞানেন্দ্র জানান, ক্ষেতের সীমানা লাইনের গাছপালা এবং ডালে জৈব বালাইনাশক জেল লাগিয়ে ফল আক্রমণকারী পোকা ধংস করা হয়। এ পদ্ধতিতে কুমড়া জাতীয় সবজির পোকা এবং আমের মাছি পোকা দমন করা হয়। ফসল স্বাস্থ্যকর ও দূষণমুক্ত রাখতে ফুল হওয়ার আগেই দমন প্রক্রিয়াগুলো প্রয়োগ করা হয়।

গাজীপুর মহানগরের ধীরাশ্রম এলাকার কৃষক মন্তাজ উদ্দিন জানান, তিনি পাঁচ কাঠা জমিতে সারা বছর মৌসুমি শাক-সবজি ও ফলমূল চাষ করেন। প্রতিদিন হাতে কীটপতঙ্গ মেরে ফেলেন। মিষ্টি কুমড়া কুচি কুচি করে কেটে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি কুমড়ো জাতীয় ফসলে ছিটিয়ে দিয়ে ক্ষতিকর পোকা দমন করা যায়। পেঁপে ও পেয়ারার মধ্যেও একই পানি মিশিয়ে পোকা দমন করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘করলা, কাঁকরোল, সরিষা ক্ষেতে মবিলের সঙ্গে হলুদের রঙ মিশিয়ে প্লাস্টিকের কৌটার ঢাকনায় লাগিয়ে জমিতে রেখে দিলে সেখানে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ উড়ে এসে বসে এবং মারা যায়।’

কীটনাশকমুক্ত ফসলের পরিচর্যা করছেন কৃষক এদিকে ক্ষতিকর রাসায়নিক বালাইনাশক পরিহার করে জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে তৃণমূল কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করার তাগিদ দেন গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা।

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, নিরাপদ খাবার পেতে হলে অবশ্যই কৃষককে সাপোর্ট দিতে হবে। বাজার অর্থনীতিতে কৃষক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষক সব পণ্য এক সঙ্গে উৎপাদন করে এবং বাজারে নিয়ে গেলে সঠিক মূল্য পায় না। বিভিন্ন হাত ঘুরে আবার যখন সেই পণ্যটি কৃষক কিনতে যায় তখন তাকে বেশি দামে কিনতে হয়। প্রাকৃতিক যেকোনো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। জলবায়ু পরিবর্তনেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। পণ্যের বাজারজাতকরণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। গণমানুষের নিরাপদ খাদ্য বিবেচনায় তৃণমূলে এ বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার এ ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।