‘কার কাছে গেলে হামার একটা কার্ড হবে?’

আবিয়া বেওয়ানওগাঁর মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের গনেশপুর গ্রামের মৃত আছির উদ্দিন মোল্লার স্ত্রী আবিয়া বেওয়া। বয়স ৯০ বছর। তারপরও পাননি বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতার কোনও কার্ড। বেঁচে থাকার তাগিদে কার্ডের জন্য ঘুরেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের দ্বারে দ্বারে। শুধু আশ্বাসই মেলে, কেউ কার্ডের ব্যবস্থা করে দেননি। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর ৬২ আর পুরুষের ৬৫ বছর সর্বনিম্ন বয়স।

এত বেশি বয়সেও কার্ড না পেয়ে আবিয়া বেওয়া আক্ষেপ করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কত বছর বয়াস হলে কার্ড হয়? কার কাছে গেলে হামার একটা কার্ড হবে? হামার জন্য একটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেন, বুড়ো বয়াসে আমি এনা শান্তি পাই। আল্লাহ তোমাকের ভালো করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামার বয়স এখন পোরায় ৯০। কত বছর থাকা হামি মেম্বার চিয়ামিনের (চেয়ারম্যান) কাছে ঘোরোচি। কোনও কাম হয়নি। কেউ হামার জন্য কিছু করে নাই।’

প্রতিবেশী আবজাল হোসেন বলেন, ‘প্রায় এক যুগেরও বেশি আগে চিকিৎসার অভাবে আবিয়ার স্বামী আছির উদ্দিন মোল্লা মারা যান। স্বামীর সঞ্চয় বলতে কিছুই ছিল না। একসময় কাজ করার সক্ষমতা হারিয়ে আবিয়া ছাগল পালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বয়সের ভারে আর এখন তাও করতে পারেন না। তাই মাঝে মধ্যেই খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়।’

আবিয়া বেওয়া জানান, দুই বছর আগে তিনি চেয়ারম্যানকে ছবি এবং আইডি কার্ডের ফটোকপি দেন। অফিস থেকে বলা হয়েছিল কার্ড হয়ে গেছে।  আগামী দু-তিন মাসের মধ্যেই তিনি টাকা পাবেন। একবছর পরেও কোনও টাকা না পেয়ে আবারও ইউনিয়ন পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান আবারও কাগজ চান। তার পরে আবারও কাগজ দেন তিনি। এভাবে দুই বছর  হতে চললো তবুও কার্ড হয়নি তার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গনেশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন মন্ডল বলেন, ‘আবিয়ার কোনও কার্ড করা হয়নি। তবে আগামীতে তাকে একটা কার্ডের ব্যবস্থা করে দেবো।’

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, ‘আবিয়া বেওয়া মান্দা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে আবেদন করলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’