শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনার প্রতিবাদ ও উপাচার্য অপসারণ দাবিতে জাবিতে বিক্ষোভ

আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলগণতান্ত্রিক কর্মসূচি চলার সময় উপাচার্যপন্থী শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনার প্রতিবাদ এবং উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবন থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করেন তারা।

‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ মঞ্চের মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা উপাচার্যের মদতে শিক্ষার্থীদের ‘পদদলিত’ করার অভিযোগ তুলে ধিক্কার জানান। তারা তদন্তের নির্লিপ্ততা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, ‘উপাচার্য তার কিছু দালাল শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়েছেন। আমরা এমন আচরণকে ধিক্কার জানাই। শুধু দুর্নীতির কারণে নয়, ছাত্রলীগ দিয়ে হামলা করার কারণে নয়, আন্দোলনকারীদেরকে ভর্ৎসনা করার কারণেও ফারজানা ইসলামের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত। গতকাল তিনি শিক্ষার্থীদের পদদলিত করে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন সেটার জন্য পদত্যাগ করা উচিত। আমরা একটি যৌক্তিক দাবিতে গত দুই মাস আগে তার বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। তখন তিনি ছাত্রলীগ দিয়ে হামলা করিয়েছিলেন। সেজন্য আমরা ফারজানা ইসলামকে ধিক্কার জানাই। পাশাপাশি দুর্র্নীতির তদন্ত নিয়ে এই রাষ্ট্র যে নির্লিপ্ত তার প্রতিও ধিক্কার জানাই।’

সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের জাবি শাখার সভাপতি আরমানুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা একটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। দীর্ঘ আন্দোলনকে ফারজানা ইসলাম সন্ত্রাসী মদতপুষ্ট ছাত্রলীগ দিয়ে দমন করার চেষ্টা করেছেন। তিনি শিক্ষকদের একটি গোষ্ঠী দিয়েও দমন করার চেষ্টা করেছেন। উপাচার্যের দুর্নীতির বিষয়ে সরকার এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা সরকারকে বলতে চাই, কাউকে দুর্নীতির লাইসেন্স দেওয়া সরকারের দায়িত্ব নয়। রাষ্ট্রের উচিত দুর্নীতির তদন্ত করে উপাচার্যকে অপসারণ করা। রাষ্ট্রকে আহ্বান করছি, এই ভাষার মাসে দুর্নীতির তদন্ত করে উপাচার্যকে অপসারণ করুন।’

সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের দফতর সম্পাদক আতাউল হক চৌধুরী আফ্রিদি বলেন, ‘উপাচার্য দুর্নীতির তদন্তের ধীরগতিকে ধিক্কার জানাই। উপাচার্য গতকাল অহমিকা দেখিয়ে ছাত্রদের পদদলিত করেছেন, এতে রাষ্ট্রের দায় আছে। কারণ রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত উপাচার্যের তদন্ত নিয়ে নির্লিপ্ত। আর সেটার সুযোগ নিয়ে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এরকম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন। অতিদ্রুত উপাচার্যের অপসারণ করিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করুন।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন– জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইমুম মৌসুমি বৃষ্টি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জাবি শাখার সদস্য সম্পদ অয়ন মারান্ডি প্রমুখ।

এর আগে (১৫ ফেব্রুয়ারি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একাডেমিক সভা বর্জন করার ঘোষণা দেন আন্দোলনরতরা। এরপর গতকাল শিক্ষার্থীদের ‘পদদলিত’ করে উপাচার্য একাডেমিক সভায় অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনে এ ঘটনা ঘটে।