সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে পাথর ভাঙা কারখানার শ্রমিকরা। বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় প্রায় দেড় হাজার পাথর ভাঙা কারখানা রয়েছে। গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক এসব কারখানায় কাজ করে থাকে। সে হিসেবে ১৫ থেকে ২০ হাজার শ্রমিক দৈনিকভিত্তিতে কাজ করতো বুড়িমারী স্থলবন্দরের আশেপাশের বিভিন্ন কারখানায়। এসব এখন বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ শতাধিক আমদানি পণ্য বোঝাই ট্রাক আনলোড ও দেশীয় প্রায় এক হাজারের মতো ট্রাক প্রতিদিন লোডিং হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। ভারতে রফতানি মালামাল নিয়ে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত করতো। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে এই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। ফলে কর্মমুখর বুড়িমারী স্থলবন্দর এখন নীরব। ট্রাক লোড-আনলোডের সাথে যুক্ত প্রায় ৮-১০ হাজার শ্রমিকও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া সিএন্ডএফ এজেন্টের অফিসে কর্মরত শ্রমিকরাও কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
এসব শ্রমিকের মধ্যে পাটগ্রাম- বুড়িমারী এলাকায় বসবাস করেন অন্তত ১০ হাজার। বাকিরা বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা-যাওয়া করতেন। সব কারখানা ও স্থলবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব শ্রমিক এখন কর্মহীন হয়ে বাড়িতে বসে আছেন।
শ্রমিক নেতা সফর উদ্দিন বলেন, ‘এসব শ্রমিকরা দিন আনে দিন খায়। এই শ্রমিকরা গত ৫দিন যাবত কর্মহীন হয়ে বাড়িতে দিন কাটাচ্ছে। তাদের অনেকের ঘরেই খাবার নেই। আরও যে কতদিন পর কাজ শুরু হবে কেউ কিছুই বলতে পারছে না। এজন্য সরকারিভাবে এসব শ্রমিকদের তালিকা করে অন্তত চাল, আলু ও লবণ দেওয়া উচিত। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।’
বুড়িমারী স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারক ব্যবসায়ী সায়েদুজ্জামান সাঈদ বলেন, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। বুড়িমারীতে বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োজিত প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব শ্রমিক দিনে যা পেত, তা দিয়ে সংসার চালাত। এখন এসব পরিবারের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য সরকারিভাবে তাদের সাহায্য করা উচিত।
শ্রমিকদের সাহায্য করা প্রসঙ্গে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, দিন আনে দিন খায় এমন ৭ থেকে ১০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে। যদি সরকারিভাবে কোনও সহযোগিতা আসে তাহলে সেটি এসব শ্রমিকদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
এদিকে শ্রমিকদের কাছে শিগগিরই সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের সবাই করোনাভাইরাস নিয়ে কঠিন সময় পার করছে। এখন চিকিৎসা সামগ্রী এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের বিষয়টি নিয়ে সরকার কাজ করছে। এর পাশাপাশি সরকার শ্রমিকদের নিয়েও ভাবছে। বিষয়টি নিয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীমহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি সরকার দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী এসব শ্রমিকের নিকট পৌঁছানোর উদ্যোগ নেবে।