অসহায়দের পাশে সেই ‘জমিলা কসাই’

Dinajpur Jomila Kosai Photo- (2)এক সময় নিজেই খেতে পারতেন না, ছিলেন অসহায়। অভাব আর ঋণের মাঝে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন স্বামী। নিজ আর ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এক সময় কসাইয়ের কাজ নেন। আজ করোনা ভাইরাসের এই সংকটময় মুহূর্তে সেই জমিলা কসাই অসহায়দের মাঝে খাদ্য বিতরণ করছেন।

বুধবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ি এলাকায় জমিলা কসাই অসহায় ৪০টি পরিবারকে সহযোগিতা করেন। কাউকে তার দোকানের সামনে আবার কাউকে সহযোগিতা পৌছে দেন তাদের বাড়ি বাড়ি। দিয়ে আসেন চাল, ডাল, তেল, আলুসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপকরণ। আর তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে জহিরুল ইসলাম।

জমিলা বেগম বলেন, ‘এক সময়ে আমি অসহায় ছিলাম। সংসারের উপার্জন ছিল না, খাদ্য ছিল না। তাই এখন বুঝতে পারি, সংসারে খাদ্য ও উপার্জন না থাকলে তাদের অবস্থা কি হয়। সেই সময়ে আমি কসাইয়ের কাজ শুরু করি। এলাকার অনেক লোকজনই তখন আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে। তাই এলাকার লোকজনের কথা কখনওই ভুলতে পারি না। আমার ঠিক সেই রকম সামর্থ নেই, এরপরও ৪০টি পরিবারকে সহযোগিতা করতে পেরেছি সেটা আমার বড় তৃপ্তি। আগামীতেও সাধ্যমত তাদের পাশে থাকবেন বলে জানান তিনি।’

ছেলে জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ও আমার মা খুব কাছে থেকে কষ্ট দেখেছি। তাই বুঝতে পারি অন্যের কষ্টগুলো। তাদের এই কষ্ট দেখে আমরা তাদের পাশে থাকার একটু চেষ্টা করেছি মাত্র। আমাদের জন্য সকলে যাতে দোয়া করেন যাতে এভাবে অন্যের পাশে থাকতে পারি।’

জমিলা বেগমের বিয়ের পর স্বামী কসাইয়ের কাজ করতেন। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় স্বামী, সন্তান নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়ি বীরগঞ্জের ঝাড়বাড়িতে। এ সময় স্বামীও বেশ কিছু কর্জ নিয়ে নিরুদ্দেশ হন। পরে ছেলেমেয়ের কথা ও সংসারের কথা ভেবে নিয়েই দোকান দেন এবং কসাইয়ের কাজ শুরু করেন। জীবনের কাছে হেরে না গিয়ে গড়ে তোলা মায়ের দোয়া মাংস ভান্ডার নামক দোকান এখন তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত জমিলা কসাই এখন দেশে পরিচিত এক নারী। সবাই তাকে চিনে ‘জমিলা কসাই’ নামে।