বুধবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মাস্কের অভাব তুলে ধরে একটি পোস্ট দেন এই চিকিৎসক। এর পর বিষয়টি নিয়ে বরগুনার বিভিন্ন মহলে আলোচনার সৃষ্টি হয়। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমাকে এন-৯৫ মাস্ক দিন অথবা মৃত্যুর মাধ্যমে পালাতে দিন। লোক দেখানো বাজারের ব্যাগের কাপড় দিয়ে তৈরি গাউন দেওয়া বন্ধ করুন।’
ডা. কামরুল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত এবং এর উপসর্গ দেখা দেওয়া রোগীদের চিকিৎসা ও নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে বরগুনায় একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক। তিনি হাসপাতালটিতে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
এছাড়া, এন-৯৫ মাস্কের গুরুত্ব তুলে ধরে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বরগুনা সদর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহরাব উদ্দীন। তিনি তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘এন-৯৫ মাস্ক ছাড়া চিকিৎসা সেবা প্রদান কিংবা স্যাম্পল সংগ্রহ করা সাংঘাতিক ঝুঁকিপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘আইসোলেশনে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তারা সাত দিন দায়িত্ব পালন শেষে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেন। অথচ বরগুনায় চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে আমার কোয়ারেন্টিনে থাকার সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয় আমার। তাই আমি যদি সংক্রমিত হই তাহলে আমার কাছে আসা সাধারণ রোগীরাও সংক্রমিত হবেন। এর মাধ্যমে পুরো জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। তাই বরগুনায় দ্রুত এন-৯৫ মাস্কের সরবরাহ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাই।’
এ বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘করোনা রোগীদের চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা সরঞ্জাম এন-৯৫ মাস্কও। তাই প্রতিদিন তারা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। সাধারণ নার্স এবং চিকিৎসকদের জন্যও পর্যাপ্ত অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করেও কোনও ফল পাওয়া যায়নি।’
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহীন খান বলেন, ‘আমরা চিকিৎসা যে সুরক্ষা সরঞ্জাম পেয়েছি তাতে এন-৯৫ মাস্ক নেই। তবে এমন একটি স্ট্যাটাস দেওয়া ওই চিকিৎসকের ঠিক হয়নি। এতে অন্য চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। আমরা এন-৯৫ মাস্ক সরকারের কাছে চেয়েছি। হয়তো শিগগিরই পেয়ে যাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য এন- ৯৫ মাস্ক সরকারি নির্দেশনায় নেই। আমরা সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবো।’
করোনাভাইরাস প্রতিরাধে গঠিত বরগুনা জেলা কমিটির প্রধান ও জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘বরগুনার স্বাস্থ্য বিভাগ এন-৯৫ মাস্কের সংকটের কথা আমাকে কখনও জানায়নি। যদি জানাতো তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি চিকিৎসকদের চাহিদা অনুযায়ী এন-৯৫ মাস্কের ব্যবস্থা করতাম।’ দ্রুতই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।