হাওরে ধানের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

Pic 1 Sunamgonj সুনামগঞ্জের হাওরে ধান কাটা শেষ হলেও ধানের দাম না বাড়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক। অতি প্রয়োজনীয় দেনা-পাওনা, রোজা ও আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে জেলায় সীমিত আাকারে ধান বিক্রি শুরু করেছেন কৃষক।

তবে বিশেষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এখন কোন কৃষক ধান বিক্রি করছেন না। স্থানীয় ধানের মোকামগুলোতে করোনা সংকটের কারণে এখন ব্যাপকভাবে ধানের কেনাবেচা হচ্ছেনা। অল্প সংখ্যক কৃষক সরাসরি ধানের খলা থেকে ধান বিক্রি করছেন।

তারা জানান, বাজারে মোটা দানার ধানের দাম ছয়শ’ থেকে সাড়ে ছয়শ’ ও চিকন দানার ধানের দাম ৭০০ টাকা মণ ধরে বিক্রি হচ্ছে। সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের কৃষক কবির মিয়া বলেন,  এখনও ধান ব্যাপক আকারে কেনা-বেচা শুরু হয়নি। তবে ২৮ ও ২৯ জাতের ধানের ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। ধানের দাম আরও না বাড়লে তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধরেরপাড় গ্রামের কৃষক সুসেন বর্মণ বলেন, চাষ করতে এখন অনেক বেশি টাকা লাগে। আগে জমিতে খরচ হতো কম। এখন সার বীজ, শ্রমিকসহ কৃষি উপকরণের দাম ও মজুরি বেড়ে গেছে। পলাশ গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন,  এখনও হাওরে কাটার ধান কাটার বাকি আছে। তবে গেলবারের চেয়ে এবার ধানের দাম একটু বেশি হলেও লাভজন পর্যায়ে এখনও হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফর জানায়, চলতি বোরো মওসুমে ২ লাখ ১৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয়, হাইব্রীড ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। হাওরে আবাদ করা হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর ও হাওরের বাইরে ৫৮ হাজার হেক্টর। জেলা খাদ্য বিভাগ চলতি বছর সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ২৫ হাজার ৮৬৬ মেট্রিকটন ধান ও স্থানীয় মিলারদের কাছ থেকে সেদ্ধ চাল ১৪ হাজার ৬৮৭  মেট্রিকটন ও ১৪ হাজার ৩০৯ মেট্রিকটন আতপ চাল কিনবে সরকার।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, কৃষক এখনও ধান শুকানো ও গোলাজাত করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে কোনও কোনও কৃষক জরুরি প্রয়োজনে অল্পস্বল্প ধান বিক্রি করছেন। ধান ওঠানো পুরোপুরি শেষ হলে স্থানীয়ভাবে ধানের বাজার আরও চাঙ্গা হবে।০

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, হাওরের আজ পর্যন্ত ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৭ হেক্টর ও পুরো জেলায় ১ লাখ ৯১ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। ধানের দাম কম কথাটি তিনি মানতে নারাজ। তিনি বলেন গেলবারের চেয়ে এবার ধানের দাম অনেক বেশি। আরও কিছুদিন পর দেশের অন্যান্য এলাকার ব্যবসায়ীরা ধান কিনতে আসবেন তখন স্থানীয় বাজারে ধানের দাম আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।

সদর উপজেলার মল্লিকপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহিনুর রেজা বলেন, তারা লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনবেন। কৃষক যদি সরকার নির্ধারিত গুণগত মানসম্পন্ন ধান নিয়ে গুদামে আসেন তাহলে কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারবেন। এজন্য কৃষকদের কৃষিকার্ড ও ব্যাংক হিসেবের নাম্বার নিয়ে আসলে কৃষক সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য বিভাগের সেবা পাবেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মোস্তফা বলেন, সরকার সরসরি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনছে। এতে কোনও ধরনের অনিয়মের করা যাবে না। ২৬ এপ্রিল থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছে ২১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। ধান ক্রয়ে মধ্যস্বত্ত ভোগীদের কোনও সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, গুদামে ধান বিক্রির টাকা সরাসরি কৃষকের ব্যাংক হিসেবে যাবে। স্থানীয়ভাবে উচ্চ ফলনশীল মোটা জাতের ধান ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন কৃষক। এছাড়া স্থানীয় ভালো জাতের ধান সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তবে স্থানীয় কৃষকরা দাবি করেন, বোরো আবাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সার, বীজধান, হালচাষ ও ধান কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত তাদের অনেক টাকা খরচ করতে হয়। স্থানীয়ভাবে ধানের না বাড়লে তারা লোকসানের মুখে পড়বেন।