সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসুমপুর ইউনিয়নের ফকিরপাড়ায় একটি ওয়াক্তিয়া জামে মসজিদ রয়েছে। সরকারের বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলনের তালিকায় এই মসজিদের নাম থাকলেও এখানকার ইমাম, মুয়াজ্জিন ও সভাপতি কিছুই জানেন না। একই অভিযোগ বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের। অন্যদিকে তালিকায় একই ইউনিয়নে পূর্ব খিয়ারপাড়া নামাজঘর মসজিদের নাম থাকলেও এ নামে মসজিদের কোনও অস্তিত্ব নেই। আবার বেশ কয়েকটি মসজিদের ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানে গোডাউন, মুরগির খামার ও পুকুর রয়েছে। মসজিদ নেই। এরকম অস্তিত্বহীন মসজিদের সংখ্যাও অগণিত। এছাড়া ভুয়া নাম ও মোবাইল নম্বর বসিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
এ ব্যাপারে মিঠাপুকুর উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ মসজিদপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। অথচ উপজেলার অনেক মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন এ টাকা পাননি বলে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। শুধু তাই নয়, ভুয়া মসজিদের নাম করেও টাকা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে তার কাছে অসংখ্য লিখিত অভিযোগ আসছে।’ তিনি জানান এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের অভিযোগ, মসজিদগুলোতে অর্থ বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সুপারভাইজার কোরবান আলী। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় তার নামে থাকা গোডাউন, মুরগির খামার ও পরিত্যক্ত পুকুরের স্থানে মসজিদের নাম বসিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। একই সঙ্গে কোরবান আলীর আত্মীয়-স্বজনদের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন হিসেবে নাম দিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। এভাবে শত শত মসজিদের নামে এবং ভুয়া মসজিদ দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মিঠাপুকুর উপজেলা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন ভুঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ নয়-ছয় করার অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিঠাপুকুর উপজেলা কার্যালয়ে গেলে অফিসটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও ফোন বন্ধ করে রাখায় তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মিঠাপুকুর কার্যালয়ের সুপারভাইজার রেজাউল করিমের দেখা মেলে। তিনি অনিয়মের অভিযোগ স্বীকার করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় এক হাজার একশ ছাব্বিশটি মসজিদ আছে। প্রতিটি মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ মসজিদের বরাদ্দ করা অর্থ লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।