রাবেয়ার মতো ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে লণ্ডভণ্ড এক হাজার ৮৮৩ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও প্রায় ২০ হাজার শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। গর্ভবতী মায়েদের প্রয়োজনীয় সেবা ও খাদ্য নিশ্চিত করা কঠিন হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, নিয়মিত পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় ওষুধসহ টিকা দেওয়ার মাধ্যমে সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা উত্তর বেদকাশীর গাজী পাড়ার খাদিজা বেগম। তিনি বলেন, ‘চারদিকে পানি। শিশু সন্তানকে কোল থেকে ছাড়ার সাহস হয় না। আর পানির মধ্যে খাবার জোগাড় করাও কঠিন হচ্ছে। এখন বেঁচে থাকার জন্য সাধারণ খাবারই পাওয়া কঠিন।’
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা বলেন, কয়রা উপজেলায় এক হাজার ৮৮৩ জন গর্ভবতী মা রয়েছেন। আর শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী প্রায় ২০ হাজার শিশু রয়েছে। তবে, তাদের স্বাস্থ্য সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা কাদা পানি ভেঙে ঘরে ঘরে যাচ্ছেন এবং তাদের সেবা ও পরামর্শ প্রদান করছেন। গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এদিকে, আম্পানের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বেডিবাঁধ গত সপ্তাহে ফের ভেঙে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাজীপাড়া এবং কয়রা সদরের ঘাটাখালী এলাকা আবারও প্লাবিত হয়েছে। ফলে নোনা পানি ঢুকে দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে। কয়রা সদরের ঘাটাখালীতে দেওয়া বাঁধের ৩০০ ফুট এলাকা ২ জুন ভেঙে গেছে। ১ জুন ভেঙেছে কয়রা সদরের হরিণখোলার বেড়িবাঁধ। স্থানীয়দের দেওয়া রিংবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বাঁধগুলো ভেঙে যাচ্ছে। বাঁধ ভেঙে নতুন করে পানি ওঠায় দুর্ভোগের সীমা নেই মানুষের।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ মানুষ নিজ উদ্যোগে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে ছিল। এরপর সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছিলাম। তারা গুরুত্ব না দেওয়ায় আবারও ভেঙে পানি ঢুকছে এলাকায়।’
তিনি বলেন, ‘একদিকে মানুষ খাবারের কষ্ট পাচ্ছে। অন্যদিকে পানির কারণে দিনকে দিন ভোগান্তি বাড়ছেই। গরিব সাধারণ মানুষ কতদিন এভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে পারে?’
কয়রা সদরের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাজীপাড়া, দীঘিরপাড়, বড়বাড়ি, কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা, ঘাটাখালী, ২ নং কয়রাসহ বেশ কিছু গ্রামের মানুষ রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বাড়িঘর সব পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রথম দফায় বাঁধ দেওয়ার পর মানুষ মনে করেছিল লোকালয়ে আর লবণ পানি ঢুকবে না। কিন্তু আবারও বাঁধ ভেঙে মানুষের সে প্রত্যাশা ম্লান হয়েছে।
কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, স্থানীয়রা পানি আটকানোর জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করছে। পাউবো কর্তৃপক্ষ একটু সহযোগিতা করলে এ বাঁধ টেকানো সম্ভব ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কয়রা উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘর-বাড়ি, মৎস্য ঘের, ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ মেরামত করে। গত দুই সপ্তাহ ধরে ভাঙনে ১১টি স্থান মেরামত করে স্থানীয় লোকজন। তবে গত বুধবার রাতে কয়েকটি বাঁধ আবারও ভেঙে তলিয়ে যায়।