বর্ষাকাল এলেই আতঙ্ক ছড়ায় রাঙামাটিতে। টানা বর্ষণে ভূমিধসের শঙ্কায় থাকতে হয় সবসময়। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। তবে বিকল্প উপায় না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণস্থানে বাস করার কথা জানিয়েছেন বসবাসকারীরা। এদিকে অতীতের মতো প্রাণহানি ও ভূমিধস এড়াতে এবার ব্যাপক প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
জানা যায়, তিন বছর আগে রাঙামাটিতে টানাবর্ষণে ভূমিধসে ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় জেলা শহরসহ উপজেলাগুলো। বন্ধ হয় সারা দেশের সঙ্গে সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রাণহানির পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয় কৃষিজমি ও ঘরবাড়ির। এই ঘটনার পর পাহাড় কাটা ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও রোধ করা যায়নি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপন। উল্টো যেখানে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটেছে, সেসব এলাকায় আগের চেয়ে দ্বিগুণ বসতি গড়ে উঠেছে। এতে আবারও শঙ্কা বেড়েছে প্রাণহানির।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, পৌর এলাকায় ৩৩টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসহ পুরো জেলায় প্রায় ১৫ হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাসবাস করছে। এসব পরিবারের মোট জনসংখ্যা কমপক্ষে ৬০ হাজার। তারা সবাই পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে আছে। তাদের সতর্ক করতে সম্প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রূপনগর, শিমুলতলী, ভেদভেদী নতুন পাড়া, মনতলা, যুব উন্নয়ন এলাকায় সাইনবোর্ড স্থাপন এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া জেলা শহরে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র।
ভেদভেদী যুব উন্নয়ন এলাকার মিণ্টু চাকমা বলেছেন, 'ঝুঁকি জেনেও আমাদের নিজের ঘরেই থাকতে হচ্ছে। ২০১৭ সালের পর থেকে প্রতিবছর বর্ষার দিনে বৃষ্টি পড়লেই আতঙ্কে থাকি। কিন্তু আমাদের এই বসতভিটা ছাড়া বিকল্প বাসস্থান নেই। এখন বৃষ্টির দিনে ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে।'
রূপনগর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এলাকার মানুষ এখন বর্ষা মৌসুম এলে আতঙ্কে থাকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবছরই আমাদের সাবধান থাকতে বলা হচ্ছে। কিন্তু নিরুপায় হয়ে আমরা এই মৃত্যুকূপে পড়ে আছি। অন্যত্র সরে যাওয়ার মতো অবস্থা থাকলে কেউই ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করতেন না।
রাঙামাটি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রবি মোহন চাকমা বলেন, '২০১৭ সালের রাঙামাটিতে ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। তখন সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ও জানমালের ক্ষতি হয়েছে আমার এলাকাতেই। এবছর আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলা প্রশাসনও পাহাড়ধস ঠেকাতে কাজ করে যাচ্ছে।'
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, 'প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে যেসব কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তারই অংশ হিসেবে পাহাড়ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আমরা সাইনবোর্ড টাঙিয়েছি। এছাড়া জনসাধারণকে সচেতন করতে ও আশ্রয়কেন্দ্রের নামসহ প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, জনসাধারণ সচেতন থাকলে এবছর রাঙামাটিতে কাউকে পাহাড়ধসে প্রাণ দিতে হবে না।'
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া জেলা শহরের সঙ্গে চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক ও খাগড়াছড়ি সড়কের একটি বিশাল অংশের সঙ্গে ১৭ দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে পার্বত্য রাঙামাটি। এর পরের বছর ২০১৮ সালের ১২ জুন জেলার নানিয়ারচরে পাহাড়ধসের ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালেও জেলার কাপ্তাইয়ে পাহাড়ধসে তিন জনের মৃত্যু হয়।