দুর্বল হচ্ছে লকডাউন, যাতায়াত বাড়ছে রেড জোনে

106414430_595249534442773_198588236102648136_n

কুমিল্লায় রেড জোন চিহ্নিত এলাকাগুলোতে শতভাগ লকডাউন মানা হচ্ছে না। বাসিন্দাদের নানা অজুহাত এবং অবাধ যাতায়াতে লডাউনের সেই পুরনো চিত্রই ফুটে উঠছে। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল সহায়তা ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি বাসিন্দাদের অনাস্থার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, প্রবেশপথের বাঁশের বেড়া চুরির ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনে যেমন তেমন, রাত ৮টার পর অবাধ যাতায়াতে বাধা দেওয়ার মতো কেউ থাকে না।

এর আগে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ২০ জুন থেকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ৩, ১০, ১২, ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডকে রেড জোন চিহ্নিত করে লকডাউন ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। লকডাউন নিশ্চিত করতে ওয়ার্ডগুলোর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার প্রবেশপথ বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও থেমে নেই মানুষের অবাধ যাতায়াত। ফলে প্রশাসনের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। চারটি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে কড়াকড়িভাবে লকডাউন কার্যকর করা গেলে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করার উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় প্রশাসনের।

তবে ওই এলাকার দিনমজুরদের দাবি, প্রশাসন এবং কাউন্সিলদের থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন না তারা। কয়েক কেজি চাল আর আটা-ময়দার সহায়তা পেলেও সবজিসহ রান্নার অন্যান্য সামগ্রী নিজের পকেটের টাকা দিয়েই কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের দাবি, তারা প্রশাসনের সহায়তা পাচ্ছেন না। পকেটে টাকা থাকলেও লকডাউন ভেঙে বাজারে না গেলে খাদ্যসামগ্রী বাসায় আসছে না।

জানা যায়, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর গত ৯ এপ্রিল কুমিল্লার বুড়িচংয়ে সর্বপ্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে আস্তে আস্তে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে সিটি করপোরেশন এলাকাসহ জেলার ১৭ উপজেলায়। শুরু থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৫২ দিনে কুমিল্লায় করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৯৭১ জন। কিন্ত পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর থেকে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকে। গত ১ জুন থেকে শুক্রবার পর্যন্ত মোট ২৬ দিনে করোনা রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়ালো। সবচেয়ে বেশি তীব্র আকার ধারণ করেছে কুমিল্লার সিটি করপোরেশন এলাকায়।

কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কুমিল্লায় এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৯৯৪জন। তারমধ্যে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ১৯১জন। আর মৃত্যু হয় ৮৭ জনের।

অন্যদিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১০৫ জন। তারমধ্যে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ৯০ জন।

রেড জোন চিহ্নিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের চারটি ওয়ার্ডের এলাকাগুলো হলো- ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়াজুরি, রেইসকোর্স, শাসনগাছা বাদশা মিয়ার বাজার; ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাউতলা, পূর্ব বাগিচাগাঁও, পুলিশ লাইন, বাদুরতলা; ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নানুয়ার দিঘিরপাড়, নবাববাড়ি চৌমুহনী, দিগম্বরীতলা এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের টমটম ব্রিজ, থিরাপুকুরপাড় ও দক্ষিণ চর্থা এলাকা।

সরেজমিনে এলাকাগুলোতে দেখা যায়, স্থানীয়রা লকডাউন মানছেন না। নানা অজুহাতে বের হচ্ছেন তারা। ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় ঘোরাফেরা করছেন।

এ ব্যাপারে এএসআই জাহিদ জানান, মানুষ ঘরে থাকুক আর না থাকুক লকডাউন ভেঙে যেন কেউ বের হতে না পারে, সেই চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।