টাঙ্গাইলের মধুপুরে একই পরিবারের চার সদস্যকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামি সাগর আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মঙ্গলবার (২১ জুলাই) দুপুরে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মধুপুর আমলী আদালতের বিচারক সামছুল আলমের আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত রবিবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে মধুপুর উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়ি এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাগর আলী (২৭)-কে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার কথা স্বীকার করে।
সে সময় র্যাবের কাছে সাগর জানায়, ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার ওসমান গনি সুদের ব্যবসা করতেন। আসামি সাগর আলীর সঙ্গে তার সুদের লেনদেন ছিল। সাগর বেশ কয়েকবার সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। গত মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) পুনরায় দুইশ’ টাকার জন্য গেলে সাগরকে বকাঝকা করে তাড়িয়ে দেয় গনি। এতে সাগর ক্ষিপ্ত হয়ে অপর এক সহযোগীকে নিয়ে তাকে হত্যা এবং টাকা-পয়সা লুটের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর তার সহযোগীকে নিয়ে বুধবার (১৫ জুলাই) দিবাগত রাত ১০টার দিকে গনির বাসায় যায়। তার আগে সাগরের সহযোগী বাজার থেকে চেতনানাশক নিয়ে আসে। পরিচিত হওয়ায় সাগর খুব স্বাভাবিকভাবেই গনির বাসায় ঢোকার অনুমতি পায়। এরপর আকস্মিক চেতনানাশক ব্যবহার করে তাকে অচেতন করে ফেলে। ঘুমে থাকায় গনির স্ত্রী তাজিরন বেগম (৩৭), ছেলে তাইজুল (১৬) ও মেয়ে সাদিয়াকেও (১০) অচেতন করে ফেলে। এরপর তাদের বাসায় ব্যবহৃত কুড়াল এবং নিজেদের নিয়ে যাওয়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে চার জনকে কুপিয়ে হত্যা করে।’
গ্রেফতারকৃত সাগর মধুপুর উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়ি গ্রামের মগরব আলীর ছেলে।
এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সাগরের সহযোগী একই এলাকার বাসিন্দা জোয়াদ আলী (৩০)-কেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘জবানবন্দি শেষে সাগরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক। এর আগে সোমবার (২০ জুলাই) সাগরের সহযোগী গ্রেফতারকৃত জোয়াদ আলীর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই সকালে মধুপুর পৌরসভার উত্তরা আবাসিক এলাকার একতলা একটি বাসা থেকে একই পরিবারের চার জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হচ্ছেন ভ্যান রিকশা ব্যবসায়ী ওসমান গনি মিয়া (৪৫), তার স্ত্রী তাজিরন বেগম (৩৭), ছেলে তাজেল (১৬) ও মেয়ে সাদিয়া (১০)। এ ঘটনায় ওই রাতেই নিহত ওসমান গনি মিয়ার বড় মেয়ে সোনিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। গনি মিয়ার গ্রামের বাড়ি উপজেলার গোলাবাড়িতে। তিনি গ্রাম ছেড়ে ওই এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস করছিলেন।