বেতনের টাকায় বন্যার্তদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে ফরিদপুর জেলা পুলিশ

বানভাসিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরাদ্বিতীয় দফা বন্যায় ফরিদপুরের সাত উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। অনেকেই ঘরছাড়া হয়ে বেড়িবাঁধ, সড়কে উঁচু স্থানে বা সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। এ অবস্থায় ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলিমুজ্জামানের আহ্বানে বানভাসি মানুষদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন জেলা পুলিশ সদস্যরা। এর আগে করোনার লকডাউন চলাকালে কর্মহীন ও অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন পুলিশ সুপার।

এই দুর্গত মানুষের পাশে জেলা পুলিশের উদ্যোগে বন্যার্তদের দ্বারে গিয়ে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। আর এই কাজে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন বাহিনীটির জেলার সব সদস্য। তাদের বেতনের একটি অংশ দিয়ে মানবিক এ কাজ পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামানের এই উদ্যোগের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন পুলিশ লাইনের রিজার্ভ অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন।

রবিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জেলা সদর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নে কবিরপুরচর, ৩৮ দাগ এলাকায় বানভাসিদের কাছে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন পুলিশ সুপার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন– অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুজ্জামান, কোতয়ালি থানার ওসি মোরশেদ আলম প্রমুখ।

এর আগে পুলিশ লাইনের রিজার্ভ অফিসার এসআই মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল সদর উপজেলার বন্যাকবলিত নর্থচ্যানেল, ডিক্রিরচর, আলিয়াবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি ও বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী।

রিজার্ভ অফিসার এসআই মো. আনোয়ার হোসেন জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশে যেভাবে করোনায় ঘরবন্দি মানুষের পাশে জেলা পুলিশ খাদ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হয়েছিল, এবার একইভাবে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি আমরা।  কখনও হাঁটু পানিতে নেমে, কখনও নৌকায় আবার কখনও পায়ে হেঁটে বন্যা কবলিতদের কাছে গিয়ে তাদের হাতে এসপি স্যার তুলে দিচ্ছেন এই সহায়তার ব্যাগ।

তিনি আরও জানান, দুই ধরনের প্যাকেটে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। একটি প্যাকেটে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, আধা লিটার তেল, আধা কেজি লবণ, সাবান ও অন্যান্য সামগ্রী এবং অপর প্যাকেটে দুই কেজি চিড়া, এক কেজি গুড়, স্যালাইন, ওষুধসহ শিশুখাদ্য রয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু, বিপদে আপদে যে পাশে থাকে সেই তো বন্ধু। বন্ধু হিসেবেই জনগণের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে পুলিশ।  জেলার সব পুলিশ সদস্যেদের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে আমরা দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। আমার জেলা পুলিশের সব ভায়েরা স্বেচ্ছায় মানবিক এই কাজে এগিয়ে এসেছেন, এজন্য সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। যতদিন দুর্যোগ চলবে ততদিন আমাদের এই কার্যক্রমও চলবে।’

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, প্রতিদিনই বাড়ছে পদ্মার পানি। রবিবার পদ্মার পানি বিপৎসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত জেলার সাত উপজেলার সাড়ে ৫শ’ গ্রামে বন্যার পানি উঠেছে। দুই লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।