পাবনা শহরের চামড়ার গোডাউনপাড়ায় গিয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন আড়তদারের সঙ্গে। জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচা চামড়া আড়তদারের প্রতিনিধিরা কিনে তুলে আনছেন শহরের মহাজনদের কাছে। পাবনায় এবার প্রায় তিন কোটি টাকার চামড়া কিনেছেন বিভিন্ন আড়তদার।
এরমধ্যে প্রায় কোটি টাকার চামড়া পাবনা সদর ও পৌর এলাকা থেকে সংগ্রহ করেছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত মূল্য নিয়ে দ্বিধান্দ্বের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঘোষিত মূল্যে তারা কিনবেন, আবার কোম্পানিগুলো চামড়া কিনবে কিনা, তা নিয়ে অজানা শঙ্কা কাজ করছে তাদের মধ্যে।
চামড়া ব্যবসায়ী চন্দন বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া, বিশেষ করে গরু ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায় আর ছাগল ২০ টাকা থেকে ৬০ টাকার মধ্যে কিনেছি। একটি গরুর চামড়া কেনা, পরিবহন-শ্রমিক ও লবন দিয়ে তৈরি করতে কমপক্ষে ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। একটি চামড়া প্রস্তুত করতে কমপক্ষে এক হাজার টাকা খরচ হয়। অনুরূপভাবে প্রতিটি ছাগলের চামড়াতে এক থেকে দেড়শ’ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এই চামড়া কোনও সমস্যা ছাড়াই কোম্পানিগুলো নেবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।
কিরন বলেন, সংগ্রহ করা চামড়া যাতে নির্বিঘ্নে কোম্পানিগুলো গ্রহণ করে এবং আমরা যাতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হই সে জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
এছাড়াও কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, ঢাকার পর পাবনার চামড়া ব্যবসায় বেশ সুনাম ছিল। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে লাভজনক এই ব্যবসা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। এই শিল্পকে ধ্বংস করতে একটি মহল বা চক্র উঠে পড়ে লেগেছে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। দেশের এই ব্যবসা ধ্বংসের পেছনে পাশের ভারত ও চীনের সম্পৃক্ততার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, এক সময়ে বাংলাদেশের চামড়ার কদর ছিল বিশ্ববাজারে। কিন্তু আজ আমাদের দেশের চামড়া দিয়েই ভারত ও চীন বিশ্বে বাহবা আদায় করছে। চামড়া শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তারা।
চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক ইদু জানান, সরকারিভাবে ঘোষিত চামড়ার দাম নিয়ে আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। মৌসুমি চামড়া ক্রেতাদের অলস টাকায় ইচ্ছেমতো দামে চামড়া কেনার ফলে, আমাদের কষ্ট হলেও তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চামড়া কিনতে হচ্ছে। ইদু বলেন, চামড়া কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা লোন দেওয়া হয়েছে ব্যাংক থেকে। সরকারিভাবে জুন পর্যন্ত সুদ না নেওয়ার কথা থাকলেও ব্যাংক সেটা মানেনি। তারা জুন পর্যন্ত সুদ কেটে নিয়েছে। ইদু বলেন, ঢাকার ট্যানারি কোম্পানিগুলো আমাদের ২৩ ফুটের বেশি চামড়া নেবে না। অথচ আমার সংগ্রহ করা চামড়ার প্রায় অর্ধেক চামড়াই তার চেয়ে বড়। তাছাড়া কোরবানি ঈদের চামড়া বড়ই হয়। এটাও একটা বড় সমস্যা বলে উল্লেখ করেন তিনি।