‘ভালো কাজও গণমাধ্যমে উঠে আসা প্রয়োজন’

চট্টগ্রামে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসংবাদপত্র সমাজকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করে উল্লেখপূর্বক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সংবাদপত্র এবং গণমাধ্যম হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেওয়ার জন্য, দায়িত্বশীলরা যাতে আরও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেই ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। সুতরাং যখন কাজের ত্রুটি হয় সেটি অবশ্যই গণমাধ্যমে উঠে আসবে। যখন কাজ ভালো হয় তখন সেটিও গণমাধ্যমে উঠে আসা প্রয়োজন। আজ যে ভালো পরিস্থিতিতে আমরা আসতে পেরেছি সেটিও গণমাধ্যমে উঠে আসা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’

সোমবার (৩ আগস্ট) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা মাথায় রেখে নানা ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সাংবাদিকদের মধ্যে যারা বেতন পাচ্ছেন না, যারা চাকরিচ্যুত কিংবা দীর্ঘদিন ধরে বেকার, এই তিন ক্যাটাগরির সাংবাদিকদের যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য এককালীন সহায়তা প্রদান করার জন্য তিনি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা প্রথম ধাপে সারা দেশে দেড় হাজার সাংবাদিককে এককালীন ১০ হাজার টাকা করে অনুদানের চেক হস্তান্তর করেছি। এটি এই দেড় হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। পরবর্তী পর্যায়ে আরও চেক বিতরণ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জেনে নিশ্চিত খুশি হবেন আমাদের আশপাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কায়ও সাংবাদিকদের এ ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে না। সেখানে সহায়তা করা হচ্ছে শুধু যারা করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের। আমরাও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের কারণে কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে তাদেরও এককালীন তিন লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মধ্যে প্রথম মাসে সবকিছু বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে অনেক কিছু খুললেও এখনও অনেক কিছু খোলেনি। কিন্তু সাংবাদিকদের কাজকর্ম কখনও বন্ধ ছিল না। সাংবাদিকরা এই করোনাভাইরাসের মধ্যে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। সংবাদ সংগ্রহ করেছেন, সংবাদ পরিবেশন করেছেন। যে কারণে পত্রিকা বের হয়েছে, টেলিভিশনে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। সাংবাদিক ভাই-বোনেরা যদি এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ না করতেন তাহলে পত্রিকায় ও টেলিভিশনে সংবাদ পরিবেশন করা সম্ভব হতো না। এর জন্য বহু সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ভাইবোন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ’আমাদের দেশের বিরোধী দল ঘরের মধ্যে বসে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে টেলিভিশনে উঁকি দিয়ে কথা বলে, ঘর থেকে বের হয় না। উঁকি দিয়ে কথা বলে সরকারের সমালোচনা করে। আমরা একদিনও বসে ছিলাম না। জনগণের পাশে থাকতে গিয়ে আমাদের দলের অনেক নেতা, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা জানি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কী হতে পারে। সেটি মাথায় রেখে কাজ করেছি। সংকট মোকাবিলায় জনগণের পাশে থাকতে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এমন শিক্ষা দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতামতকে ভুল প্রমাণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্ব প্রমাণ করেছে সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারলে করোনাভাইরাসের মতো দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব।’

‘পান থেকে চুন খসলেই হই হই রই রই করা সঠিক নয়’ জানিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রথম দিকে চট্টগ্রামে অনেক অসুবিধা ছিল। আইসিইউ বেড থেকে শুরু করে নরমাল বেডের সমস্যা ছিল। আজ আইসিইউ বেড খালি আছে, নরমাল বেডও খালি। প্রথমদিকের পত্রপত্রিকায় যে সংবাদগুলো এসেছে সেগুলো আমার চোখে পড়েছে। চট্টগ্রামে রোগী ৫০০, বেড আছে ৪০০ এ ধরনের খবর পরিবেশিত হয়েছে। অথচ করোনা আক্রান্ত শতকরা ৮০ ভাগের বেশি মানুষকে হাসপাতালে যেতে হয় না।‘

তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমি তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে শুরু থেকেই সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ার মালিকপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছিলাম যাতে সাংবাদিক ভাইবোনদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো দেওয়া হয়। করোনাভাইরাসের কারণে এমন কোনও সেক্টর নাই, নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, সমগ্র বিশ্বব্যাপী এটি হচ্ছে চিত্র। তাই আমি বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম, এই করোনাভাইরাসের মধ্যে আমরা কষ্টটা যেন ভাগ করে নিই। এই দুর্যোগ কিন্তু সব সময় থাকবে না। তাই দুর্যোগের সময় আমাদের অসুবিধা হলেও আমি সব গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাবো সাংবাদিকদের বেতন ভাতা যতটুকু সম্ভব সঠিকভাবে যেন পরিশোধ করা হয়।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দেশের তুলনায় সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। যদি তা-ই না হতো তাহলে আমাদের দেশে মৃত্যুর হার এত কম হতো না। মৃত্যুর হার উন্নত দেশগুলোর চেয়ে তো কম বটেই, এমনকি আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ভারত-পাকিস্তানের চেয়েও কম।’

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম। এ সময় সিইউজে নেতারা তথ্যমন্ত্রীকে বিভিন্ন দাবি সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।’

পরে চট্টগ্রাম বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে করোনাভাইরাসসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন তথ্যমন্ত্রী। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বিসহ চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি বিভিন্ন দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।