অন্নের খোঁজে শাপলার বিলে

117037702_1004067236702710_4122111658332219867_n

আকাশে শ্রাবণের মেঘ। ভরাট জলাশয় থই থই। বিলের নতুন জলে ফুটতে শুরু করেছে শাপলা। এটি শুধু জাতীয় ফুলই নয়, মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও জনপ্রিয়। এই ভরা বর্ষায় গোপালগঞ্জ জেলার শতাধিক বিলে শাপলা তুলে পেট চালাচ্ছেন কয়েক হাজার দরিদ্র মানুষ। আর এই শাপলাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর, সাতপাড় ও কাশিয়ানি উপজেলার সিংগা, হাতিয়ারা, কোটালীপাড়ার রামনগর, কালিগঞ্জ, ভঙ্গারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে শাপলা বিক্রির বাজারও গড়ে উঠেছে।

গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী-মুকসুদপুরের সিংগার বিল, চান্দারবিল এবং কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়ার জোয়ারিয়ার বিল, কান্দির বিলসহ শতাধিক বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় হাজার হাজার শাপলা। বর্ষা মৌসুমে কৃষকের তেমন কাজও থাকে না। তাই বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এই শাপলা তোলাকেই সাময়িক পেশা হিসেবে নেন। এই পেশায় কোনও পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বিল থেকে শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

117196519_608815236497258_8519811025341636117_n

শাপলা তোলার কাজে নিয়োজিতরা বলেন, 'ভোরে নৌকা নিয়ে বিলে যেয়ে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলি। প্রতিদিন একশ থেকে চারশ আটি (১০ পিস শাপলায় এক মোঠা। ১০ মোঠায় এক আটি) শাপলা তুলি। দুপুরে পাইকাররা আসেন। তাদের কাছে বিক্রি করে তিনশ থেকে চারশ টাকা পাই। তারা এসব শাপলা সংগ্রহ করে জেলা সদরসহ আশপাশের জেলার হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা গ্রামের শাপলা সংগ্রহকারী বৌদ্ধনাথ বিশ্বাস বলেন, 'বর্ষার সময় আমাদের বিলে বেশ শাপলা জন্মে। এই সময় আমাদের এলাকায় কোনও ফসল হয় না। তাই আমি প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সিংগার বিলে শাপলা সংগ্রহ করি। তাতে আমার ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হয়। এভাবেই আমাদের এলাকার অনেকে উপার্জন করে সংসার চালান।'

117270708_289148922188919_2105552051671812551_n

একই গ্রামের নসিমন চালক মনিশংকর মণ্ডল ও বিকাশ বিশ্বাস বলেন, 'সিংগা ব্রিজ থেকে প্রতিদিন দুই-তিন নসিমন শাপলা বাগেরহাটের মোল্লাহাট, নড়াইল জেলার নড়াগাতী বাজারে নিয়ে যাই। এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা এখানে এসে শাপলা কিনে নিয়ে আবার ওখানে বিক্রি করেন। প্রতিদিন আমাদের হাজার টাকা রোজগার হয়। এভাবে প্রায় চার মাস চলবে এই শাপলার ট্রিপ।'

79304014_309506536831584_8296652636218531921_n

শাপলার পাইকার ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম, আনিস মোল্লা, মনোজ মল্লিক বলেন, 'আমরা সাতপাড়, সিংগা ও হাতিয়াড়া থেকে এলাকার মানুষদের কাছ থেকে শাপলা কিনে গোপালগঞ্জ জেলা শহরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করি। এতে যা হয়, তাতে ভালোই হয়। ঘুরে না বেড়িয়ে কাজ করে খাওয়া ভালো। এতে শাপলা সংগ্রহকারীদেরও উপকার হলো আর আমাদেরও কিছু হলো। করোনার সময় তাই এবছর একটু লাভ কম হচ্ছে। তবে মানুষের খাদ্য হিসেবে এই শাপলার বেশ চাহিদা রয়েছে।'

117226104_1822212544582307_4685288698718358902_n

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, 'শাপলা এই অঞ্চলের খুবই জনপ্রিয় একটি প্রাকৃতিক সবজি। সুদূর অতীত থেকে এই এলাকার মানুষ সবজি হিসেবে শাপলা খেয়ে আসছে। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ শাপলায় রয়েছে আয়োডিন ও আয়রন এবং সঙ্গে রয়েছে পানি। এছাড়া শাপলা বিক্রি করে দৈনন্দিন আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেক দরিদ্র মানুষ। গোপালগঞ্জের বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া শাপলা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায়ও যেয়ে থাকে।'